অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার প্রস্তাবনায় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উপেক্ষিত - দৈনিকশিক্ষা

অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার প্রস্তাবনায় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উপেক্ষিত

ড. মো. শামসুদ্দীন ইলিয়াস |

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ওয়েবসাইটে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় “বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সম্মানিত শিক্ষকগণের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকগণের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার ওপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষাউপমন্ত্রী, মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব, কমিশনের পূর্ণকালীন সম্মানিত সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গত  ২৫ আগস্ট এবং ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি পরিমার্জিত খসড়া নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়”।

উক্ত নোটিশে, প্রণীত খসড়া প্রস্তাবনার ওপর আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মতামত প্রেরণের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সম্মানিত শিক্ষকগণকে অনুরোধ করা হয়। উক্ত সভায় গৃহীত খসড়া নীতিমালায় শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়তো আলোচিত হয়নি অথবা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বা উপেক্ষিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দৃঢ় বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অভিন্ন নীতিমালার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের প্রতিফলন দেখতে চান।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকগণ যেন চাপমুক্ত পরিবেশে জ্ঞান অন্বেষণ, গবেষণাকর্ম পরিচালনা এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধসমূহ যেন  ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর/ঝপড়ঢ়ঁং ওহফবীবফ/অইউঈ ওহফবীবফ জার্নালসহ অন্যান্য জবপড়মহরুবফ জার্নালে প্রকাশ করতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান সম্বলিত ধারা খসড়া নীতিমালায় সুরক্ষিত থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিলো।  দুঃখজনক হলেও সত্য যে, খসড়া নীতিমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হলেও তা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে নীতিমালায় কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। একটি গবেষণাকর্ম পরিচালনার জন্য প্রস্তাবনা তৈরী, কম্পিটেন্ট অথরিটি কর্তৃক উক্ত প্রস্তাবনা গ্রহণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত করা, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন লিখন ও বাঁধাই এই পর্যায়গুলো অতিক্রম করতে হয়। এরপর আসে গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা ও তা প্রকাশের জন্য কোন ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর/ঝপড়ঢ়ঁং ওহফবীবফ/অইউঈ ওহফবীবফ জার্নালসহ অন্যান্য জবপড়মহরুবফ জার্নালে প্রেরণের বিষয়।

বছরে এক বা একাধিক এরুপ গবেষণাকর্ম পরিচালনা ও প্রবন্ধ প্রকাশের শর্ত পদোন্নতি বা পদোন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে। পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎকর্ষ লাভের জন্য গবেষণা ও প্রকাশনার গুরুত্ব কোনো শিক্ষকই অস্বীকার করেন না। একটি গবেষণাকর্ম সঠিকভাবে সমাপ্ত করা এবং তা মানসম্মত কোন জার্নালে প্রকাশ করার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রতিবছর এক বা একাধিক গবেষণাকর্ম পরিচালনার সুবিধার্থে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য প্রয়োজনীয় পৃথক গবেষণা বরাদ্দ ্এবং প্রকাশনা বরাদ্দের নিশ্চয়তার বিধান নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে- এটা সকল শিক্ষকেরই প্রত্যাশা ছিলো।

পেশাগত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই পঠন-পাঠন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণাকর্ম পরিচালনার বিষয়ে শিক্ষকগণ জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু গবেষণা ও প্রকাশনার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না-করে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য লজিষ্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থার বিষয়টির দিকে দৃষ্টিপাত না-করে ইউজিসি কি শিক্ষাক্ষেত্রে জাতির পিতার শিক্ষা বিষয়ক নীতি ও প্রত্যাশাকেই অমর্যাদার জায়গায় ঠেলে দিচ্ছেন না? এ যেন হাত-পা বেধে কাউকে নদীতে সাঁতার কাটতে বলার মত বিষয়। অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধাবিহীন সামান্য বেতনভোগী একজন শিক্ষকের পক্ষে নিজের টাকায় গবেষণাকর্ম  পরিচালনা ও মানসম্মত জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করা কীভাবে সম্ভব? এ কথাটি কমিটির বিজ্ঞ সদস্যগণ একবারও ভাবলেন না? বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগের। 

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও খ্যাতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে তার ফ্যাকাল্টি মেম্বার তথা শিক্ষকদের মানসম্মত গবেষণাকর্ম, প্রকাশনা, একাডেমিক যোগাযোগ এবং শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা পালনের ভেতর দিয়ে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের পাঠ্যক্রম, পঠন-পাঠনের ধরন ও গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানার এবং বিভিন্ন দেশের স্কলারদের সাথে পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানের সুযোগ পেলে শিক্ষকগণ নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে একদিকে যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হতে পারেন অন্যদিকে লব্ধ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণায় প্রয়োগ করে শিক্ষার মানোন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। তাই দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগদান ও অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আনুষঙ্গিক সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রয়োজন। নীতিমালায় এ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি; যা শিক্ষক সমাজের জন্য বেদনাদায়ক এবং তাঁদের কাছে অগ্রহণযোগ্যও বটে।

কয়েক বছর আগে বিভিন্ন দেশের গবেষকদের অংশগ্রহণে ইটালিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কয়েকজন পাকি শিক্ষক ও গবেষকের সাথে পরিচিত হবার সুযোগে জেনেছি এবং দেখেছি যে, তাঁরা প্রত্যেকে “উচ্চশিক্ষা কমিশন” থেকে টু-ওয়ে এয়ার ফেয়ারসহ পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং আন্তর্জাতিক মানে দৈনন্দিন ভাতা পেয়েছেন। স্ট্যাটাস ভেদে তাঁরা প্রত্যেকে পেয়েছেন দেড় থেকে দু’লাখ পাকিস্তানি রুপি। অন্যদিকে আমরা বাংলাদেশের শিক্ষক-গবেষকরা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সর্বসাকুল্যে পেয়েছি মাত্র ২৭ হাজার টাকা, যা প্রয়োজনীয় মোট খরচের সামান্য একটি অংশ মাত্র। বাকীটা আমাদের বেতনের টাকা থেকে খরচ করতে হয়েছে। এমনটিতো হওয়ার কথা ছিলো না। বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে আমরা এগিয়ে গেলেও শিক্ষায় বিেিয়াগের ক্ষেত্রে বর্বর পাকিস্তান থেকে আমরা এখনো কতটা পেছনে আছি দয়া করে একবার ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।

শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও আতœবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নাই। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় স্কলারশীপ যোগাড় করা এখন অনেক কঠিন ব্যাপার। শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত সেবা প্রাপ্তি এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের স্বার্থেই প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পরিমান ও সংখ্যক উচ্চশিক্ষা বৃত্তির বরাদ্দ থাকবে এবং শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন; ইউজিসি এই বিষয়টি নিশ্চিত করবেন- নীতিমালায় এমন কথা উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

ব্যক্তিগত উৎকর্ষ সাধন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত সেবা প্রদানের প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষকদেরকে শিক্ষাছুটি নিতে হয়। মাস্টার্স প্রোগ্রাম দু’বছরের হলেও অনেক সময় ডিগ্রি শেষ করতে আরো বেশি সময় লেগে যায়। পরবর্তীতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিগ্রি অ্যাওয়ার্ড হতে প্রায় চার বছর লেগে যায়। তাই, শিক্ষাছুটির পরিমান মাস্টার্স ও পিএইচডি’র জন্য  সবেতনে অন্তত: ৬ (ছয়) বছর হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীপদে নিয়োজিত কোন শিক্ষক দীর্ঘ মেয়াদে ছুটিতে গেলে বিভাগের টিচিং-লার্নিং কার্যক্রম, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ছুটিজনিত শূন্যপদের বিপরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার রেওয়াজ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চালু রয়েছে। মানসম্পন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত কোন শিক্ষক নিজ প্রচেষ্টায় স্কলারশীপ যোগাড় করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি অর্জন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে বিভাগে যোগদান করলে তাঁর শিক্ষাছুটিকালীন পিরিয়ডকে সক্রিয় চাকুরি হিসাবে গণনার প্রভিশনও নীতিমালায় থাকা উচিৎ। উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে তিনি তো বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নতর সেবাই প্রদান করবেন; এর বিনিময়ে শিক্ষাছুটিকে সক্রিয় চাকুরি হিসাবে গণ্য করা হলে তা কি খুব বেশি করা হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধির স্বার্থেই এটা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক ডেপুটেশনে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে বা কোন সরকারি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কোথাও নিযুক্ত হলে তাঁর ডেপুটেশনকালীন পিড়িয়ডও সক্রিয় চাকুরি হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ এবং নীতিমালায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই দেশে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসাবে গড়ে তোলার স্বার্থে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজন হয় এবং অনেক শিক্ষকও নিয়োগ দিতে হয়। কারন গড়ে ওঠার সাথে সাথেই সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক থাকেন না। এক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত জুনিয়র-সিনিয়র শিক্ষকগণ নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইলে তাঁরা যেন নীতিমালাগত কোনো বাধার সম্মুখীন না-হয়ে শর্তহীনভাবে আবেদন করার সুযোগ পান, সে বিষয়টি প্রস্তাবিত নীতিমালায় স্পষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া গ্রেড-১ বা গ্রেড-২ কোনো অধ্যাপককে যদি নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে নীতিমালা যেন বাধা হয়ে না-দাঁড়ায় এবং আবেদনকারি গ্রেড-১ বা গ্রেড-২ কোনো অধ্যাপকের যেন পদমর্যাদা, সম্মান, গ্রেড ও প্রাপ্য বেতন-ভাতাদিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা অক্ষুন্ন থাকে তার নিশ্চয়তা বিধানের কথাও নতুন নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে। 

প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সম্মানিত শিক্ষকগণ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ডিগ্রিভেদে এক বা একাধিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন। প্রস্তাবিত নীতিমালায় এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। তাছাড়া শিক্ষকদেরকে গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য গবেষণা ও প্রকাশনা খরচ বাবদ বরাদ্দের পাশাপাশি মানসম্মত প্রতিটি প্রকাশনার জন্য ইনসেন্টিভ হিসাবে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদানের বিষয়ও নীতিমালায় থাকা জরুরী। 

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সারাদেশব্যাপী অনুষ্ঠিত দু’টি বড় ধরনের পাবলিক পরীক্ষা। প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষার হলে কিছু কিছু শিক্ষকের অনাকাঙ্খিত সহযোগিতা, কেন্দের সাথে কোনো কোনো স্কুল-কলেজের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং, জিপিএ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ করা বা না-করাসহ ইত্যাদি নানামুখি উপাদানের প্রভাবের কারনে স্কুল ও কলেজ ভেদে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে তারতম্য ঘটে। তাছাড়া গ্রাম ও শহরের স্কুল-কলেজগুলির শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাডেমিক সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক পার্থক্যের কারনেও মোট জিপিএ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো করা একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে খুবই ভালো রেজাল্ট করতে পারে; খুঁজলে এমন নজির যথেষ্ট পরিমানে পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো ফলাফল অর্জনকৃত শিক্ষার্থীদেরই ভালো শিক্ষক হওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকে, এবং যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুযায়ি ৫-স্কেলে জিপিএ ৩-কে প্রথম শ্রেণি হিসাবে গণ্য করা হয়, তাই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ওপর খুব বেশি ওয়েটেজ না দিয়ে প্রস্তাবিত জিপিএ ৫-স্কেলে ৪.৫ এর স্থলে ৪ বা ৩.৫ এবং জিপিএ ৪-স্কেলে ৩ নির্ধারণ করা হলে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট করা অনেক শিক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতিযোগিতার সুযোগ পাবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।

উল্লেখ্য, অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের সাথে মঞ্জুরী কমিশন-এর চেয়ারম্যান, কমিশনের পূর্ণকালীন সম্মানিত সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সম্মানিত নেতৃবৃন্দ যুক্ত আছেন; যারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অথবা বর্তমান অধ্যাপক। সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন করা যায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একাডেমিক উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত সেবা প্রদানের সাথে সম্পর্কিত উপরোল্লেখিত বিষয়সমূহ শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকগণ বিবেচনায় নিলেন না কোন্ যুক্তিতে ? তাঁরা কি মনে করেন না যে উল্লেখিত বিষয়সমূহ নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিৎ ? তাঁরা কীভাবে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ও জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুপারিশকৃত বিষয়সমূহ ভুলে গেলেন? শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকবৃন্দকে বিষয়গুলো ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

 অভিন্ন নীতিমালা বিষয়ে পূর্বে লেখা প্রবন্ধ দু’টিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য অভিন্ন নীতিমালা থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি; এবং নীতিমালার পাশাপাশি এন্ট্রি লেভেলে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করেছি। বর্তমান প্রবন্ধে আলোচিত বিষয়সমূহ নীতিমালায় অর্ন্তভূক্ত করা হলে নীতিমালাটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে নীতিমালা যতই আদর্শ মানসম্পন্ন করা হোক না কেন, অভিজ্ঞতা বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে এন্ট্রি লেভেল- বিশেষ করে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষমতা রেখে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হলে এবং ধাপভিত্তিক বাছাই প্রক্রিয়া [বিষয়ের ওপর এক্্রটেন্সিভ লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রদর্শনী ক্লাস] অনুসরণ করা না-হলে  ব্যক্তিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত হয়ে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও মানসম্মত একটি নিয়োগ প্রত্রিয়া সম্পন্ন করা কখনোই সম্ভব হবে না- একথা দৃঢ়ভাবেই বলা যায়।

অতএব, প্রভাষক নিয়োগের জন্য যথাযথ বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক মনোনীত মান উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে নিয়োগের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কাছে নাম সুপারিশ  করার কাজটি ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’ অথবা  ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’-এর ওপর ন্যস্ত করা উচিৎ- উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে এটা সময়েরই দাবি।

ড. মো. শামসুদ্দীন ইলিয়াস : অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0097239017486572