অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে যশোর বাঘারপাড়ার রায়পুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জামাতকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে তিনদফা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো জবাব না দেয়ায় সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভা শেষে রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিল্লাল হোসেন।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অধ্যক্ষকে একাধিকবার ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকার জন্য বলা হলেও তা তিনি আমলে নেননি। তাই, তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরও জবাব না দেয়ায় কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য বোর্ডকে সুপারিশ কেন করা হবে না- তা জানতে চেয়ে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বাঘারপাড়ার রায়পুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জামাতকে করা শোকজে উল্লেখ করা হয়, তিনি স্কুল থেকে দুই বার নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে ঢাকায় ব্যক্তিগত কাজে যান। নিজের কাজে ঘুরে এসে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। নিজের কাজে ঘুরে এসে ৬ হাজার ২০০ টাকা হজম করে নেন। শোকজে বলা হয়, দুই দফা প্রজেক্ট কমিটি করলেও স্কুল সংষ্কার করা হয়নি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১০ মার্চ বারান্দার গেট নির্মাণের অজুহাত দিয়ে ৯০ হাজার টাকা সাধারণ তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। একমাসের কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি। আব্দুল আলীম, ওবাইদুর রহমান ও শাহীনের সাথে পজিশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয় একই সাথে জাফরের কাছথেকে নগদ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে পজিসন বুঝিয়ে দেয়া হয়নি কেন তা জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির এক সদস্যের প্রতি মাসের সম্মানী ভাতা সাধারণ তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায় ওই টাকা ওই সদস্য নেন না। কিন্তু তার টাকা অধ্যক্ষ উঠিয়ে কি করেন সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ৭ম, ৮ম ও ১০ শ্রেণির সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ ৬২ হাজার ৭৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ টাকা আদায়ের কোনো রশিদ শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়নি। এমনকি সে টাকা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলেও জমা দেয়া হয়নি । গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রতিষ্ঠানের পিওন বাঘারপাড়ার জয়নগর গ্রামের সামদিয়াত হোসেন বস্তাভর্তি বই চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হয়। এ ঘটনায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল সাময়িকভাবে তাকে বহিস্কারও করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে স্কুল কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়ায় অভিযুক্ত পিয়নকে কেনো ফের স্কুলের সব কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এছাড়া ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকার ফ্যান, ল্যাপটপ, মনিটরসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল কেনা হয়। যা রেজুলেশনের বাইরে ও ক্রয় কমিটি বাদেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে। যার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের স্কুল শাখা ও কলেজ শাখার ৯৮৯ শিক্ষার্থীর কাছথেকে ২০০ টাকা করে নিয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয় যার কোনো রশিদ, বিল ভাওচার নেই এমনকি ক্রয় কমিটির মাধ্যমেও খরিদ হয়নি।
২০১৭ ও ২০১৮ অর্থ বছর ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করা হয় প্রজেক্ট কমিটি ছাড়া। এছাড়া যাতায়াতের রাস্তা ব্যয় ১৬ হাজার ২০০ টাকা, বাথরুমের ব্যয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৪ টাকা ব্যয়ের সিড়ি নির্মান ব্যয় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৭ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প রেজুলেশন নাই, প্রজেক্ট কমিটি ছাড়া ব্যায় হয়েছে। এছাড়াও বার্ষিক ব্যায়ের হিসেবে দুই লাখ ২ হাজার ৯৭ টাকার গরমিল রয়েছে উল্লেখ করে এসব বিষয়ে জাবাব চাওয়া হয় উল্লেখিত নোটিশে। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় শোকজের জবাব না পেয়ে পরিচালনা পরিষদের মুলতবি সভায় তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ব্যাপারটা জানতে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জামাতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।