করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় অফিস আদালতসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করার কড়া নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তার ফেসবুকে দেয়া স্টাটাস মতে, টাকার অভাবে পুরনো বাইক দিয়ে শুক্রবার (৩ এপ্রিল) থেকে রাইড শেয়ারিং শুরু করেছেন তিনি। তার পরিচয়ে লেখা রয়েছে তিনি বেসরকারি শিক্ষক ফেসবুক ফোরামের সদস্য। সম্ভবত তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোনো প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন।
আর বেসরকারি শিক্ষকদের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি শেয়ার করেছেন শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম নিজেই। পোস্টে তিনি জানান, দোকান থেকে বাকি না দেয়ায় লজ্জিত শিক্ষক অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই রাইড শেয়ার করছেন।
ফেসবুক পোস্টে শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি খুবই অসহায়, তাই এই পথ অবলম্বন করলাম। সারা দেশে চলছে লকডাউন। মাসিক বাজেট যেটা ছিল, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতে সেটা মাস শেষ না হতে অনেক আগে শেষ। দোকানে আর বাকি দিচ্ছে না। আমি টাকা পরিশোধ করতে পারব কিনা বিশ্বাস করতে পারছে না। আসলে আমি শিক্ষক হিসাবে খুবই লজ্জিত। তখন নিজেকে খুবই ছোট মনে হচ্ছিল।’
‘তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের পুরাতন বাইক নিয়ে আজ "পাঠাও" কোম্পানির ভাড়া মারব। রাস্তায় গাড়ি না থাকাতে প্রায় যাত্রী বাইকের ওপর নির্ভরশীল। তাই সকাল সকাল নিজের বাইক নিয়ে বাহির হলাম। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন,’ যোগ করেন তিনি।
পোস্টে শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমি জানি আমার এই পোস্টে অনেকে খারাপ কমেন্টস করবেন। বড় বড় কথা বলবেন। বড় বড় বাণী না শুনিয়ে পারলে, পরিবার নিয়ে বাঁচার জন্য সহযোগিতা করুন। তখনতো আর পারবেন না। শিক্ষক হিসেবে জীবনে শুধু মান-সম্মান পেলাম। এখন সেটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে বাঁচার জন্য শুরু শিক্ষকতা করা। এতে আর কিছুই নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’
এই শিক্ষকের পোস্টে অনেকেই নেতিবাচক কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ পক্ষেও বলেছেন। কেউ বলেছেন শিক্ষকতার মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি। এত যদি টাকার দরকার হয় তবে তো গার্মেন্টসে কাজ করতে পারতেন। আবার কেউ বলেছেন, এমপিও শিক্ষকরা প্রতিমাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখের আগে হাতে টাকা পান না। এটাতো জানা কথা। তো আজ মাত্র ৩ এপ্রিল। তিনি মাদরাসা না কারিগরি না সাধারণ স্কুল শিক্ষক তা জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতার চেক ছাড়তে একটু দেরিই হয়। সাধারণত পরের মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখ লেগে যায় এমপিওর টাকা তুলতে। ফেব্রুয়ারি মাসের এমপিওর টাকা হাতে পেতে শিক্ষকদে ১০ মার্চ পর্যন্ত লেগেছিলো।
মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের মার্চ মাসের এমপিওর চেক গত ২৫ মার্চ ছাড় হয়েছে। তারা ৯ অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে টাকা তুলতে পারবেন। অপরদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজের চেক ছাড় হয়নি। ৫ এপ্রিল জানা যাবে কবে ছাড় হতে পারে।
পক্ষান্তরে, সব সরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদারাসার শিক্ষকরা ১ এপ্রিল মার্চের বেতন ও ২ এপ্রিল বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন।