পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তৃষা। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী। পরিবারের অভাব- অনটনের কারণে অন্য চার ভাই-বোন পড়ালেখা করতে না পারলেও নিজের অদম্য ইচ্ছায় তৃষা পড়ালেখা চালিয়ে যান। হতদরিদ্র কৃষক বাবা তৃষাকে পড়ালেখার জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেননি। এমনকি অভাবের কারণে স্কুলজীবনে একাধিকবার তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এতে কখনো ভেঙে পড়েননি তৃষা।
শিক্ষক ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতা নিয়ে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান। তৃষা মেধাবী বলে অনেকেই তাঁকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। এভাবেই দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা করে চলতি শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তৃষা। এ যেন অন্ধকারে এক চিলতে আলো। তৃষার বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামে। বাবা হতদরিদ্র দিনমজুর মজিবর রহমান ও মা গৃহিণী কুরসি বেগম।
তৃষার মা কুরসি বেগম জানান, তাঁদের তিন কন্যার মধ্যে দুই কন্যাকে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতেই বিয়ে দিয়ে দেন। এমনকি অর্থের অভাবে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোলে দুই ছেলেকেও কাজে লাগিয়ে দিতে বাধ্য হন তাঁরা। পরিবারের জন্য দুমুঠো অন্ন-বস্ত্রের জোগাড় করতেই ব্যস্ত সবাই।
এ অবস্থায় তৃষার মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তাঁদের কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি আরো জানান, ছোটবেলা থেকেই তৃষা মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে নিজ গ্রামের স্কুল থেকে ও অষ্টম শ্রেণিতে উপজেলা সদরের মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।
পরে একই স্কুল থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পান। এসএসসি পাস করার পর দিনমজুর দুই ভাই তাঁদের উপার্জিত আয় দিয়ে তৃষাকে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করেন। সেখান থেকে এ বছর তিনি এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পায়।
তৃষার বাবা জানান, এসএসসি পাস করার আগে অর্থাভাবে একাধিকবার তৃষার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তবে তৃষার শিক্ষক ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতার কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। এমনকি তৃষাকে পড়াশোনা করানো নিয়ে প্রতিবেশীরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে তাঁকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তৃষার আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন তৃষার হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
এদিকে তৃষার মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান তাঁর বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে তৃষার পড়াশোনায় সহযোগিতা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেন।