কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ণের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. অমিত চাকমা এবার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (ইউডব্লিউএ) ১৯তম ভাইস চ্যান্সেলর এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অমিত আগামী বছর তাঁর নতুন কর্মস্থলে যোগ দিবেন। ইউডব্লিউএ চ্যান্সেলর রবার্ট ফরাসি এসি বলেন, অধ্যাপক চাকমাকে উচ্চমানের যোগ্যতা এবং বিস্তৃত দক্ষতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট নিয়োগ দিয়েছে।
ইতিপূর্বে তিনি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলুর একাডেমিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সর্বশেষ দুই মেয়াদে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারি’এর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে জুনে অবসর নেন।
ড. চাকমা জানান, আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। অবসর বলে কিছু নেই। তাই পাঁচ বছরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী বছর ৩০ জুন যোগদানের কথা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্নের পদ ছিলো প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর। আর সেখানে উল্টো অর্থাৎ আগে ভাইস চ্যান্সলর আর পরে প্রেসিডেন্ট।
কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একটি ভবনের নাম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অমিত চাকমার নামানুসারে অমিত চাকমা ইঞ্জিনিয়ার স্কুল বিল্ডিং অর্থাৎ ‘অমিত চাকমা প্রকৌশল ভবন’ করা হয়েছে। কারণ, কর্তৃপক্ষ মনে করেন, আন্তর্জাতিক কৌশল উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও মর্যাদা লাভ করেছে, প্রতিষ্ঠানের শীক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হতে প্রস্তুত করেছে।
অমিত চাকমার নামে ভবনের নামকরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি আগে জানিয়েছিলেন, 'আমি জানতাম না যে এরকম একটি বিস্ময়কর বিষয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ, এ ব্যাপারে আমাকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। গত ১২ অক্টোবর ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গেলে আমাকে চমকে দিয়ে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।'
তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর জ্যাক কুইন এবং তার স্ত্রী শ্যারন কুইন ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ অনুদান দিয়ে এই চমৎকার বিল্ডিংটি স্থাপন করেন এবং তা আমাকে উৎসর্গ করে আমাকে গর্বিত করেছেন। এই গর্ব আমার একার নয়; এই গর্ব সকল অভিবাসীদের, বাঙ্গালি হিসেবে এই গৌরব বাংলাদেশেরও বটে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এক চাকমা পরিবারে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী এই গবেষক বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল এবং পেট্রোলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষণার জন্য। বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষে তিনি আলজেরিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে পড়তে যান এবং প্রকৌশল বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
পরে কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে রাসায়নিক প্রকৌশল বিষয়ে এমএএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অফ রেজিনায় রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত রেগিনার ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিসার্চ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখানে থাকার সময়ই তার সাফল্যের জন্য তিনি কানাডার টপ ৪০ আন্ডার ৪০তে স্থান করে নেন।