উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে এক ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুইডিশ সরকারি কৌঁসুলিরা। সরকারি কৌঁসুলিদের এ সিদ্ধান্তকে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার বলে উল্লেখ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সুইডিশ সরকারি আইনজীবী কর্তৃপক্ষ (সুইডিশ প্রশিকিউশন অথরিটি) এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারি সহকারী প্রধান কৌঁসুলি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে (ধর্ষণ মামলার) তদন্ত আর না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’।
সাত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেন সরকারি আইনজীবী কর্তৃপক্ষ। তদন্ত আর না চালানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অভিযোগ তোলার অনেক দিন হয়ে গেছে। এতো দিনে প্রমাণাদি হালকা হয়ে গেছে।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্টকহোমে এক বক্তৃতার দেয়ার অনুষ্ঠানে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে আগস্টে জোগ দেয়ার সময় এক নারীকে ধর্ষণ ও আরেক নারীকে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে ভয় দেখান। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সুইডেনের এক আদালত অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, যে দুটি ঘটনার কথা বলা হয়েছে, তা দু‘পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ এসব অভিযোগকে বানোয়াট হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ আর কিছু নয়। গোপন তথ্য প্রকাশ করায় তাকে সুইডেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবশন করার পায়তারা হচ্ছে এসব।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তবে, ১০ দিনের মাথায় তাকে জামিন দেয়া হয়। প্রত্যাবসন এড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেন অ্যাসাঞ্জ।
ওই বছরের জুনে লন্ডনস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন তিনি। অবশেষে এ বছরের এপ্রিলে ইকুয়েডর দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তাকে শরণার্থী আশ্রয় প্রদান বন্ধ করে দেয়। এরপরই লন্ডন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় তাকে ৫০ সপ্তাহের জেল দেয়া হয়েছে। লন্ডনের বেলমারস জেলে রাখা হয়েছে অ্যাসাঞ্জকে।
সমথর্কদের কাছে ‘সত্য প্রকাশের সারথি’ হিসেবে পরিচিত অ্যাসাঞ্জ। তবে, সমালোচকরা তাকে ‘মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণকারী’ হিসেবে মনে করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উইকিলিস প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি। সরকারি ও বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য ও ছবি ফাঁস করাই মিশন এ অ্যাক্টিভিস্ট ওয়েবসাইটির।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গোপন নথি প্রকাশ করে বিশ্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেন। প্রকাশ করা বিভিন্ন নথি ও ভিডিও‘র মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বেসামরিক নাগরিককে হত্যার দৃশ্য ও তথ্যও ছিলো।