দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এত দিন প্রতিষ্ঠানটির নামই জানত না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গবেষণা সংস্থাটির কাজ সম্পর্কেও মানুষ অজানা ছিল। তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর সবার নজরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও পরীক্ষা ও অন্যান্য সেবাদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলার মধ্যেই চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়নে আইইডিসিআরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আরিফুর রহমান।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে এরই মধ্যে দুই ধাপে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিংভিত্তিক এআইআই ব্যাংক, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। আপাতত এই ১০ কোটি ডলার বা ৮৫০ কোটি টাকার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আইইডিসিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এআইআই ব্যাংকের প্রথম ধাপের ৮৫০ কোটি টাকা দিয়ে আইইডিসিআরের পরীক্ষা করার সক্ষমতা বাড়ানো হবে। বিদ্যমান যে পরীক্ষাগার সুবিধা আছে, তা আরো বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে প্রতিষ্ঠানটির যানবাহন। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকসহ সব স্তরের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর কার্যক্রম চালানো হবে। এ ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী দপ্তর এবং সংক্রামক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে করে ঢাকার সদর দপ্তরের ওপর চাপ কমবে। সে জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইইডিসিআরের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকল্পটি তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি মিললে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মহিউদ্দীন ওসমানী বলেন, ‘এআইআই ব্যাংক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে দুই ধাপে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রথম ধাপের ১০ কোটি ডলার দিয়ে আমরা আইইডিসিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে হাত দেব। এ জন্য যা কিছু করণীয় আমরা তা-ই করব।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শাখা কার্যালয় ঢাকায় থাকলেও এখন পর্যন্ত এআইআই ব্যাংকের শাখা কার্যালয় বাংলাদেশে চালু হয়নি। যার ফলে সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। তাই এআইআই ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, তাদের ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে। সরকার প্রথম দিকে এই প্রস্তাবে রাজি না হলেও বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় এআইআই ব্যাংকের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এরই মধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদন মিলেছে। ‘কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ারনেস’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ২৭৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। গত ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। সব দেশেরই এখন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম জরুরি। প্রতিযোগিতার বাজারে করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের জন্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটির টাকা সরাসরি খরচ করবে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর।
করোনা মোকাবেলায় এডিবির অর্থায়নে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ দেবে ১০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ৫৫০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। ওই টাকা দিয়ে দেশের ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটিতে ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার করা হবে।