কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আকবর আলী খান কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সব নিয়োগই অবৈধ।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট মাউশিতে জমা দেয়া উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ এবং সভাপতির মনগড়া নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির প্রতিনিধি রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি।
মো. হেমায়েত উদ্দিন হাওলাদার এবং মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন তদন্ত করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে ২১৪জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী পাশপাশি অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। যারা সবাই অবৈধ উপায়ে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। নিয়োগবিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কোনো নিয়োগই বিধিসম্মত হয়নি।
জানা যায়, ঢাকায় একটি মহিলা শাখাসহ ৫টি এবং দেশের অন্যান্য জেলা- পঞ্চগড়, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগজ্ঞ, গাজীপুর, মানিকগজ্ঞ, চিটাগাংরোড (নারায়ণগঞ্জ), মতলব উত্তর, মনোহরদি, হোসেনপুর, কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া, চান্দিনা, বুড়িচং, বরুড়া, গোপালগজ্ঞ, হোমনা, মুরাদনগর ইত্যাদি স্থানে শাখা এবং দেশের প্রায় ৩৫টি স্থায়ী অঞ্চলসহ বেশ কয়টি জেলাতে আকবর আলী খান কলেজের ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ ইউনিট রয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে কলেজটির অধ্যক্ষের এমপিও সাময়িক স্থগিত হয় ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে। এরপর তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সাময়িক স্থগিতাদেশ বাতিলের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। গত ২৪ এপ্রিল কলেজটির মূল শাখার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এর এমপিও স্থায়ীভাবে স্থগিত ও বাতিল কেন হবে তা জানাতে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক এমপিও বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে যত টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন তা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার জন্য পিডিআর আইন ১৯১৩ অনুযায়ী মামলা দায়ের করার জন্য অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
কারিগরি বোর্ডর চেয়ারম্যান বরাবর লেখা মন্ত্রণালয়ের অপর এক চিঠিতে কলেরেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. রশিদুল হক খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
২৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের এমপিও অধিশাখার উপ-সচিব নুসরাত জাবীন বানু স্বাক্ষরিত তিনটি আলাদা চিঠিতে শাখা বন্ধ, এমপিও স্থগিত ও অধিদপ্তর এবং বোর্ডকে এসব নির্দেশের কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্তে শিক্ষক নিয়োগ ও শাখা খোলায় প্রতারণা, জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি এবং ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনিকশিক্ষার হাতে থাকা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে আকবর আলী খান কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত হলেও দীর্ঘদিন যাবত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়।
তবে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সুপারিশ আমলে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। জানা যায়, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ীভাবে শাখা স্থাপন, ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ, কোর্সের মূল্যায়ন ও সনদপত্র প্রদান, সরকারি বেতনভাতা প্রদান, কোর্স পরিচালনা ইত্যাদি ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি নীতিমালা অনুমোদন করেন যা ১৯৮৬সালে সংসদীয় ১নং আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়। উক্ত আইনের কাঠামোতেই কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে।
কলেজের কোর্সসমূহের মধ্যে রয়েছে : কম্পিউটার প্রশিক্ষণ; মৎস্য চাষ; নার্সারী প্রশিক্ষণ; শস্য সংরক্ষণ; বায়োগ্যাস; মৌমাছির চাষ; কনফেকশনারী; রান্নাবান্না; ইউনানী চচেকিৎসা ; পোষাক তৈরি; এমব্রয়ডারী ; নকশিকাঁথা; কুটির শিল্প; বিউটিফিকেশন; মোবাইলফোন রিপেয়ারিং; ফ্রিজ/এয়ারকন্ডিশন; অটোশপ/ওয়েল্ডিং; রাজমিস্ত্রির কাজ; হোটেল ম্যানেজমেন্ট; মটর ড্রাইভিং; বাদ্যযন্ত্র/সংগীত শিক্ষা; তথ্য যোগাযোগ; দলিল লিখন ও শর্টহ্যান্ড ইত্যাদি।