গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারির প্রভাবে বিপর্যস্ত সমগ্র বিশ্ব। কর্মসংস্থানের অভাবে বিশ্বব্যাপী চাকরি হারাচ্ছেন প্রায় ১০০ কোটি মানুষ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ১৫-২৪ বছর বয়স্ক তরুণদের বেকার হয়ে পড়ার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। ‘বাংলাদেশ জনশক্তি জরিপ, ২০১৭’ এর তথ্যমতে, দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪.২ শতাংশ। এর মধ্যে ১৫-২৯ বছর বয়স্ক তরুণ বেকারের সংখ্যা ১০.২ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধটিতে আরও জানা যায়, করোনা মহামারির প্রভাবে এই সংখ্যা বহুলাংশে বেড়েছে। একসেস টু ইনফরমেশন (ধ২র) প্রকল্পের একটি গবেষণার তথ্যমতে, ইতোমধ্যেই করোনার প্রভাবে বেকার হয়ে পড়েছে দেশের প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মধ্যে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে বেকারত্বের এ উচ্চহার বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই ‘নতুন স্বাভাবিক’ বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে ঘরে বসে কাজ করার রীতি। ফলে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
করোনা-পরবর্তী পৃথিবীতে স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, ফার্মাসিউটিক্যালস, এগ্রো-ফুড, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বেশকিছু খাতে সৃষ্টি হচ্ছে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাই করোনা-পরবর্তী অনিশ্চিত ভবিষ্যতে আমাদের তরুণদের বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে না তুলে সমসাময়িক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী করে তোলার প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের শত বছর ধরে আঁকড়ে থাকা বিদ্যমান মুখস্থনির্ভর ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত নামমাত্র ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। কারিগরি শিক্ষার জন্য পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠন হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রের স্বল্পতা, শিক্ষকদের অদক্ষতাসহ নানাবিধ কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অপ্রতুল। ফলে তরুণরা উচ্চশিক্ষার সনদ অর্জনে সফল হলেও কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। জাতির কর্মদক্ষতা ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হলে গুণগত মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় মানদণ্ডে একটি ‘স্কিল ম্যাপ’ তৈরি করতে হবে এবং চাহিদা অনুসারে দক্ষতার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে হবে। নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বিদ্যমান মুখস্থনির্ভর শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন আনতে হবে এবং এর পরিবর্তে দক্ষতানির্ভর ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে দক্ষতানির্ভর কোর্স চালু করতে হবে এবং শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : অনিক আহমেদ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।