আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাত সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় প্রাথমিকভাবে এ টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দাবি এবং সে অনুযায়ী প্রাক্কলিত বরাদ্দের হিসাব করছি। বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠানো হবে। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে আমরা পদক্ষেপ নেব।’
সূত্র মতে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাত হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে ৩২ হাজার ৫৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা চলতি অর্থবছর থেকে দুই হাজার ৯৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় পরিচালন ব্যয় প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ২২ হাজার ৫৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে উন্নয়ন খাতে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অনুকূলে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সব মিলিয়ে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেলে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো বাস্তবায়ন তাদের জন্য দুরূহ হবে। তাই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সার্বিক কার্যক্রম ভালোভাবে শেষ করতে আরো ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা চাইছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এ দাবি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতের জন্য সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিচালন খাতে তিন হাজার ৯১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেশি চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৭৫টি অনুমোদিত প্রকল্প চলমান থাকবে। এই ৭৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রকৃত চাহিদা ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আরো ৩৮টি প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য আগামী বাজেটে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।
এ হিসেবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ বিভাগের উন্নয়ন খাতের মোট চাহিদা সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ খাতে প্রাপ্ত সিলিং ১০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে আরো সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জন্যও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বকেয়া, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের অনুমোদিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের চাহিদাসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জন্য মোট প্রয়োজন দুই হাজার ২৩০ কোটি টাকা। অথচ আগামী অর্থবছরের জন্য সিলিং দেয়া হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আরো এক হাজার ৩০ কোটি টাকা বেশি প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়া সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রামের (এসইডিপি) ২৯টি স্কিমের মধ্যে পাঁচটি স্কিম অর্থ বিভাগ অনুমোদন করেছে। অন্য ছয়টি স্কিম অর্থ বিভাগের বিবেচনায় রয়েছে। বাকি ১৮টি স্কিম প্রণয়ন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৯টি স্কিমের বিপরীতে আসছে বাজেটে মোট তিন হাজার ৬৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
অথচ ২৯টি স্কিমের বিপরীতে আগামী বাজেটে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে হিসেবে নতুন বাজেটে আরো দুই হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। চিঠিতে এসব বিষয় বর্ণনা করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৪১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।