রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা যখন গোটা ভারতকে গ্রাস করতে শুরু করেছে, ঠিক তখন শিক্ষকসুলভ উচ্চ নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। ক’দিন আগে সাবেক এক শিক্ষার্থীর হামলার শিকার হয়েছিলেন বাংলার শিক্ষক আব্দুল কাফি। এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগের শুনানিতে হামলাকারী সেই শিক্ষার্থীর জন্য আদালতে জামিন প্রার্থনা করে ক্ষমাশীলতার অনন্য ঔদার্য্য দেখিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাফি মনে করেন, কঠোর নয়, কোমল মানবিক স্পর্শেই সম্ভব প্রকৃত উত্তরণ।
কয়েকদিন আগে এক সাবেক শিক্ষার্থী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক কাফিকে মারধর করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যাদবপুরের ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। গ্রেফতার হন রাজেশ সাঁতরা নামে ওই তরুণ। তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হয়। তবে হামলার শিকার হওয়া শিক্ষক কাফি রোববার (২৮ জুলাই) স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাদবপুর থানায় গিয়ে জানান, তিনি চান না ওই প্রাক্তন ছাত্রের কোনও ক্ষতি হোক বা কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে হোক তাকে। ছেলেটি জামিন পাক, পুলিশের কাছে এমন আশার কথাও প্রকাশ করেছিলেন কাফি।
পুলিশ সেই মতো সোমবার (২৯ জুলাই) আদালতে কেস ডায়েরি পেশ করে। আব্দুল কাফি নিজেও এজলাসে উপস্থিত হন। নিজের আইনজীবী মারফত ওই শিক্ষক তার ইচ্ছের কথা আদালতে জানান। ছাত্রটি জামিন পেলে তার আপত্তি নেই বলে আদালতকে জানানো হয়। তবে পুলিশি হেফাজত থেকে সরাসরি জামিন দেয়ার আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। শিক্ষকের ক্ষমা প্রার্থনার কথা বিবেচনা করে ১৪ দিনের বদলে তাকে দুইদিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এদিনই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কাফি এবং বাংলা বিভাগের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন রাজেশের বাবা-মা এবং দিদি। বেশ খানিকক্ষণ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয় তাদের।
সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময় জানায়, শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাতে অবসাদগ্রস্ত ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাবা-মা। অধ্যাপক কাফির কাছে ক্ষমাও চান তারা। তবে রাজেশ কেন এমন কাজ করলেন, সে ব্যাপারে তাদের জানা নেই বলে উল্লেখ করে পরিবার। কাফিকে রাজেশের বাবা জানান, ছাত্র থাকাকালীন কাফি সম্পর্কে ছেলের কাছে তিনি প্রশংসাই শুনেছেন বারবার। কাফি বলেন, ‘রাজেশের প্রতি আমার কোনও আক্রোশ কাজ করছে না। বরং ওর সুস্থতাই আমি চাইছি। কেন সে এই কাজ করল, সেটা খুঁজে বের করাই আসল।’
এদিন আবার সারাদেশ ও রাজ্যে ক্রমবর্ধমান শিক্ষক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করে শিক্ষক সংগঠন জুটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কোনও মহল থেকে আবার রাজেশের সঙ্গে নানা রাজনৈতিক সংযোগের অভিযোগ উঠছে। তাদের বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে কাফি বলেন, ‘এমন কোনও তথ্য প্রমাণ যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন এসব বলে ওই ছাত্রের গায়ে দাগ লাগিয়ে দেয়ার কোনও মানে হয় না।’