আজ এমন শিক্ষকের বড়ই অভাব! - দৈনিকশিক্ষা

আজ এমন শিক্ষকের বড়ই অভাব!

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ |

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আনন্দের সাথে সম্পর্কহীন শিক্ষা অন্ধ, শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন আনন্দ পঙ্গু।’ আমাদের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক শিক্ষকের পাঠদান রীতি সেকেলে, যান্ত্রিক, প্রাণপ্রাচুর্য বিবর্জিত। অনেকেই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে আসেন না, অনেকে ভুল পড়ান। শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করলে ধরে নেন ছাত্ররাই তাঁদের পরীক্ষা নিচ্ছে। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে সকল আক্রোশ ঝাড়েন ছাত্রছাত্রীদের উপর। পান থেকে চুন খসলেই পিতামাতা তুলে খিস্তি-খেউড়, প্র্যাকটিক্যালে ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়, টিসি দেওয়ার হুমকি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এমন সাজা কিশোরমানসে তীব্র দহন আনে। অনিশ্চয়তা, ভীতি তাদের স্কুলের প্রতি বৈরাগ্যই শুধু নয়, অনেকের মধ্যেই Psychosomatic Disorder বা মনোবিকার আনে যা তীব্র আকার ধারণ করলে আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে পারে।

সম্প্রতি ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। তার নিজের ও পিতা-মাতার অপমানকে সে বড় করে দেখেছে। এ বয়সটা স্বপ্ন দেখার সময়। অল্পেও এরা আনন্দিত হয়, সামান্য কষ্টে এরা মুষড়ে পড়ে। অরিত্রীকে প্রায় এই গোত্রেই ফেলা যায়। বড় হয়ে গেছে তাই, এরা শিশুদের সঙ্গে মিশতে পারে না আবার পরিণতদের বয়সী না হওয়ায় তাদের সঙ্গেও মিশতে পারে না। তাই এরা থাকে স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল।

অন্যদিকে ধনী বা ক্ষমতাধর ব্যক্তির সন্তান, প্রিয়দর্শিনী ছাত্রীর প্রতি কিছু শিক্ষকের কদর্য উত্সাহ দৃশ্যমান, যা বাকি শিক্ষার্থীদের হীনম্মন্যতায় ভোগায়। ক্লাসে না পড়িয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করার বিষয়টি আজ ওপেন সিক্রেট। সকল অভিভাবকের পক্ষে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠে না। খড়গ নেমে আসে শিক্ষার্থীদের উপর। বিদ্যালয় শুধু পাঠদানেরই স্থান নয়, নৈতিকতা শিক্ষার বিশেষ কেন্দ্র। সেখানে কোমলমতি অনেক ছাত্রছাত্রী এই সকল নৈরাজ্যে বিভ্রান্ত হয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ায়। আজ ক্লাস পার্টি, কাল ওমুকের জন্মদিন ইত্যাদির টাকা অনেক অভিভাবক দিতে না পেরে নিজেরা অভুক্ত থাকেন। আর রোদনভরা সেই নোংরাচিত্র সন্তানেরা দেখে আর কিছু না করতে পেরে মরমে মরমে মরে যায়।

ভর্তি বাণিজ্যের শিকার হয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী উপেক্ষিত হয়। শিক্ষক নিয়োগ দান নিয়ে হাজারো প্রশ্ন। ক্ষমতাধর মামা-চাচার জোরে অযোগ্য ব্যক্তির শিক্ষক নিয়োগের খবর মিডিয়াতে আসে। এত এত পরীক্ষা, বিশাল বিশাল সিলেবাস ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থকীট হতে বাধ্য করে। ফলে, তারা শিল্প-সাহিত্য-ক্রীড়াজগতের অপার আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে জিপিএ-ফাইভ পাওয়ার ইঁদুর দৌড়ে তারা আত্মসর্বস্ব, রোবট হয়ে বেড়ে ওঠে।

স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার ব্যাচ টিচার ছিলেন আমির স্যার। কোনো ছাত্র অসুস্থ হলে তিনি নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী এটা-ওটা কিনে ছাত্রের বাসায় যেতেন। জ্বর হলে মাথায় স্পঞ্জ করে দিতেন। দুর্বল-দরিদ্র ছাত্রদের বই কিনে দিতেন। অবসরে ব্যাচ করে বিনে পয়সায় পড়াতেন। ফিসের অভাবে কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে লুকিয়ে নিজের গাঁটের টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্যও করেছেন। আজ এমন শিক্ষকের বড়ই অভাব!

 

লেখক : উপ-অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরি

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061430931091309