আজ ১৪২৫ বাংলা সনের চৈত্রের শেষ দিন, চৈত্র সংক্রান্তি। বিগত বছরের চাওয়া, না পাওয়ার সব গ্লানি ভুলে নানা আয়োজনে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আনন্দে আজ মেতে উঠবে বাঙালি। জীর্ণ পুরাতন আর সব গ্লানিকে ‘ধুয়ে-মুছে যাক গ্লানি’- এই মঙ্গল কামনায় বাঙালি আজ বিদায় জানাবে বাংলা ১৪২৫ সালকে। বাংলা একাডেমি তথা সরকারি হিসাবে আজ সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে কালের গর্ভে চিরতরে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর।
বিদায় চিরদিন বেদনাদায়ক হলেও বর্ষবিদায়ে থাকে এক অন্যরকম মাত্রা। কেননা পরের দিনই নতুন দিনের প্রত্যাশায় আঁধার কেটে ওঠবে নতুন বছরের সূর্য। গত বছরের সব দেনা-পাওনার খাতাকে লোকাচার-পার্বণে বিদায় জানাবে ব্যবসায়ীরা। পরদিনই খোলা হবে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের নতুন খাতা। যার লোকায়ত নাম ‘হালখাতা’। সারা বছরের খরিদ্দারদের কাছে বকেয়া টাকা তুলতে বছরের এই দিনটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার রেওয়াজ কত শত বছরের তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। চড়ক পূজা চৈত্র সংক্রান্তির এক অন্যতম অনুষঙ্গ। শত শত বছর ধরে চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলা উইকিপিডিয়া সূত্রমতে, চৈত্র থেকে বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত সূর্যের যখন প্রচণ্ড উত্তাপ থাকে তখন সূর্যের তেজ প্রশমন ও বৃষ্টি লাভের আশায় কৃষিজীবী সমাজ বহু অতীতে চৈত্র সংক্রান্তির উদ্ভাবন করেছিল। চৈত্র সংক্রান্তি এক সময় গ্রামীণ জনপদের প্রধান উৎসব হলেও কালের প্রবাহে একসময় নাগরিক জীবনেও স্থান করে নেয়। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে এখনও চলে নানা ধরনের মেলা, উৎসব। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠি খেলা, গান, আবৃত্তি, সঙযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান।
তবে সনাতন ধর্মের পঞ্জিকা অনুসারীরা চৈত্র সংক্রান্তি পালন করবেন রোববার। এদিন পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় ‘চৈত্র সংক্রান্তি’র শোভাযাত্রা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় শুভ হালখাতার। বছরের শেষ এ দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করেন শাঁখারীবাজারের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পুরান ঢাকার এ অঞ্চলটিতে একদল শিব-পার্বতী সেজে খোল-কর্তাল, মন্দিরার তালে তালে কীর্তন করে ছুটে চলেন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়।
এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি ও আগামীকাল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নগরজুড়ে বসবে মেলা। মেলায় তালপাতার পাখা, বাঁশ-বেতের কুলা, চালনী, মাটির হাঁড়ি, সরা, ব্যাংক, শৌখিন সামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য যেমন: লাড্ডু, তিলা, গজা, জিলাপি, বাতাসাসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য বেঁচা-কেনা হবে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ উদযাপিত হবে চৈত্র সংক্রান্তি।
চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান : এদিকে রাজধানী ঢাকাতেও আগামীকাল চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে থাকছে নানা আয়োজন। বাংলা বছর ১৪২৫ বিদায় এবং বাংলা বর্ষবরণ ১৪২৬ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করেছে। আজ বিকেল ৪টায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বিজু উৎসব, লাঠি খেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নৃত্য, ঢাক-ঢোল পরিবেশনা, লোকনৃত্য, সাইদুলের কিচ্ছা এবং অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মেলা, ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় লাঠি খেলা। এছাড়া থাকছে পুঁথি পাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির নানা আয়োজন।