২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি একটি ইতিহাস। আমরা সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিদেশে। ইতিমধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক রাজ’ হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে সমস্যার গভীরে গিয়ে যোগ্য চালক তৈরি, প্রশিক্ষণ, লাইসেন্সবিহীনদের লাইসেন্সের আওতায় আনা, যোগ্যতাসাপেক্ষে ভারী যান চালানোর লাইসেন্স প্রদান, সড়ক-মহাসড়কের ত্রুটি নিরসনে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এত্তসব সম্মিলিত উদ্যোগের পরেও কী কারণে প্রতিনিয়ত ধ্বংসস্তূপ দেখেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না? এজন্য মানসিকতা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আরো কাজ আছে। প্রতীক্ষিত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। প্রায় ২ বছর হয়ে গেল এই আইন পাশ হলো। কিন্তু কোনো বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। আমরা জানিয়েছি আইনটির শিরোনাম ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তির মেয়াদ ১০ বছর করা, অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং লাইসেন্সবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে এবং তাতে কারো মৃত্যু হলে মামলা ৩০২ ধারায় হবে উল্লেখযোগ্য।
সরকার কর্তৃক ঘোষিত ও পালনকৃত ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০১৯-কে কেন্দ্র করে এবং জাহানারা কাঞ্চনের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে অক্টোবর মাস জুড়ে নিরাপদ সড়ক চাই পক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘জীবনের আগে জীবিকা নয়, সড়ক দুর্ঘটনা আর নয়’।
তাই সামগ্রিকতা নিয়ে এসডিজির ১ নম্বর এজেন্ডা দারিদ্র্য বিমোচনকে লক্ষ্যে এনেই এগোতে হবে। Poverty and Peace can not walk together. ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে গরিবি হটান ও সম্পদ বৈষম্য দূরীকরণ এজেন্ডাও থাকতে হবে। সড়কে যেমন শৃঙ্খলা প্রয়োজন, তার চেয়ে অধিক প্রয়োজন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। সরকার পরিচালিত মাতৃত্বকালীন ভাতা ও স্বপ্ন প্যাকেজ কার্যক্রমই এর নিরাপদ করতে পারে। তাহলেই দেশ ও জাতি টেকসইভাবে নিরাপদ থাকবে। মালিক-শ্রমিক তথা চালক সড়কমান সব নিয়েই শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সোনার ফসল ফলবে।
প্রসঙ্গত আমার পিতা ডা. মফিজুর রহমান ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ সালে কানাডার টরেন্টোর অনতিদূর হেমিলটনে তবলিগি দাওয়াত পথে বরফ ঝড়ে বৃষ্টিতে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন, দুই জন তাত্ক্ষণিক মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময়, পঙ্গুত্ব ও কর্মহীন-জ্ঞানহীন হয়ে পরপারে চলে যান। কাজেই দেশ-বিদেশেও এই মড়ক আছে।
মানববন্ধন ও মিছিলে একই সঙ্গে ‘দখলমুক্ত ফুটপাত চাই’ ব্যানারও অনেকের হাতে ছিল। আমাদের প্রিয় বাংলা মাতৃভাষা যেমন আজ মাতৃভাষা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। তেমনি নিরাপদ সড়ক চাই দিবস ও সারা জাহানে পালিত হোক এ দাবিও রাখছি। তাহলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিলের হাজারো জাহানারার আত্মা শান্তি পাবে। ধনসম্পদ লোভী মালিকদের শোষণ-শাসন মানসিকতা থেকে, শোষিত সম্পদহীন করে রাখা চালক, শ্রমিক মেকানিকদের আর বৈষম্য ও শ্রমঘণ্টার অধিকার সংরক্ষণে সুষ্ঠু আয় বণ্টন অধিকার থাকতে হবে।
ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক চিকিত্সা বিজ্ঞানে প্রবেশ করলেন, জাহানারাকে জাহানবাসীর কাছে জানান দেওয়া, যাতে এভাবে আর কারো প্রাণ দিতে না হয়। রোগের চিকিত্সার জন্য আপাতব্যবস্থা হতে পারে; কিন্তু রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা অবিশ্যি দীর্ঘমেয়াদিভাবেই গ্রহণ করতে হবে। তা এসডিজি ১ নম্বর এজেন্ডায়ই সাব্যস্ত করা আছে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’। সাম্যতা ও ন্যায্যতার মধ্যেই তা অন্তর্নিহিত। যা move করে তা-ই Movement। ছাত্রছাত্রীদের সৃষ্ট আন্দোলন Move করার দৃষ্টান্ত। সরকার অসরকার ছাত্র-জনতা একাকার হয়েই আইন তৈরি হয়েছে। কাজেই তার ওপর ছুরিকাটা বা পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়।
এ এইচ এম নোমান : উপদেষ্টা সদস্য, নিরাপদ সড়ক চাই।