আজকের শিক্ষক আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা - দৈনিকশিক্ষা

আজকের শিক্ষক আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য YOUNG TEACHER : THE FUTURE OF THE PROFESSION. বছর ঘুরে ফিরে আসে শিক্ষক দিবস। শিক্ষক সমাজের কাছে এ দিবসটি অহঙ্কার করার মতো। জানা মতে, বিশ্বের অন্যান্য পেশার মানুষের স্মরণ করার মতো কোনো দিবস নেই। শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। তাঁদের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিশ্বে শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের অনেকেই এ দিবসটি সম্পর্কে তেমন জ্ঞাত নয়। এ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দিবসটি হয়ে পড়েছে গুরুত্বহীন। সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে দিবসটি নিয়ে তেমন ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

প্রতিবছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষক দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি র‌্যালি ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে থাকে। আমরা প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস বিদ্যালয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে পালন করে থাকে। অথচ ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস সরকারিভাবে পালনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভাবনা দৃশ্যমান নয়। 

শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম দেশ-বিদেশে সমাদৃত। এ উন্নয়নে শিক্ষক সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। জাতি গড়ার কারিগর তথা শিক্ষকরা শিক্ষা উন্নয়নে মুখ্য অংশীদার। শিক্ষক সমাজের একটি মাত্র দিবস সরকারিভাবে পালন না করে বিদ্যালয় খোলা রেখে তাদের অবদান স্বীকৃতি না দেয়ার শামিল। শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে ব্যথিত মনে দিবসটিতে বিদ্যালয় বন্ধ রেখে সরকারিভাবে পালনের দাবি জানাই। 

শিক্ষাবান্ধব সরকারের অনেক উন্নয়নের পরও আজও বৈষম্যের বেড়াজালে নিমজ্জিত শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষক সমাজ। শিক্ষায় বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে বলেও দৃশ্যমান নয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক সাফল্য। কিন্তু এ সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে নোট গাইড। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছরে পরেও শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষক সমাজের মাঝে বৈষম্যের দেয়াল বিরাজমান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে বেতন বৈষম্য নিয়ে আজ অসন্তোষ চরমে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও কিন্ডারগার্টেন তথা অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সময়সূচি ও পাঠ্য বইয়ের বিশাল বৈষম্য। এ বৈষম্যের কারণে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর খাবার, উপবৃত্তিসহ নানা উদ্যোগ ম্লান হয়ে আজ প্রাথমিক শিক্ষার অস্বিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে। 

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন মতিঝিল থানার পিএন্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে শিক্ষার্থী সংকট স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি শিক্ষকদের শিক্ষার্থী সংকট দূর করার নির্দেশ দেন। বাস্তব সমস্যা হলো আশেপাশের বিদ্যালয়গুলোর সময়সূচির সাথে পিএন্ডটি স্কুলের সময়সূচির বিশাল ব্যবধান। আরেকটি সমস্যা হলো উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি অবৈধ দখল করে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। সময়সূচি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দায় তো শিক্ষকদের নয়। এ দায় নিয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে। 

বেসরকারি শিক্ষকদের মাঝেও এমপিও, নন-এমপিও নিয়ে বৈষম্য। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজের সাথে বেসরকারি শিক্ষকদের মাঝে বাড়ি ভাড়াসহ বেতনের পাহাড়সহ বৈষম্য।

আজ প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষার সকল বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এ বছরের মূল প্রতিপাদ্যের মর্ম দাঁড়ায়, এ প্রজন্মের শিক্ষকেরা আগামী প্রজন্মের সুনাগরিক তৈরি করার স্বপ্নদ্রষ্টা। এর মাঝে কতিপয় চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। 

প্রথমত, এ প্রজন্মের শিক্ষকেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইতিহাস পড়ে বেড়ে উঠেনি। বরং তাঁরা স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ইতিহাস জেনে এসেছে। অপরদিকে, মর্যাদা ও বেতন স্কেলের কার্পণ্যতার জন্য মেধাবী তরুণ সমাজ শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে। আর যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন, তাঁরা বৈষম্য, পাঠদান বহির্ভূত কাজের চাপ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাবুডুব খাচ্ছেন।

কুমিল্লা জেলার শিক্ষক নেতা মো. কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া এ বিষয়ে বলেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি শিক্ষক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’ বক্তব্যটি বাস্তব। এ প্রেক্ষাপটে নবপ্রজন্মের শিক্ষকদের দেশের সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জ্ঞান যাচাইয়ের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের  শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষাদান বহির্ভূত সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। 

এক কথায় শিক্ষকদের তৃতীয় ও ২য় শ্রেণির বেতন স্কেল ও মর্যাদা দিয়ে ১ম শ্রেণির সুনাগরিক তৈরি শুধু স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। শিক্ষক সংগঠনগুলোর মাঝে বিগত বছরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনে কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ বছর বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলোকে নিয়ে একত্রে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে হয়ত তাঁদের মাঝে তৈরি হবে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের আগ্রহ। শিক্ষকদের মর্যাদা ও বৈষম্য দূর করার অভিপ্রায়ে শিক্ষক সমাজ এগিয়ে যাক। এ স্বপ্ন হোক বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অঙ্গীকার।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045790672302246