বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আজকের কিশোরসমাজ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ এই কিশোরদের নিয়ে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে কিশোর বয়সি ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে নেশা করা, চুরি করা, ছিনতাই করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, গ্যাং তৈরি করা, খুন করা, ধর্ষণ করা, জুয়াখেলা, কামাসক্ত হওয়া ইত্যাদি। খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশে প্রথমে তারা মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। পরবর্তীকালে তারা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
ইংরেজি মাধ্যমের কিশোররাও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়? তারা নিজেদের মধ্যে পালটাপালটি গ্রুপ তৈরি করে মারাত্মক বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মেয়েদের ইভটিজিং করছে। দলবদ্ধ হয়ে তারা দিনের আলোয়ও ছিনতাইয়ের মতো নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। তারা গ্যাং তৈরি করে বিভিন্ন বাহারি নাম দিচ্ছে যেমন- ডিসকো গ্রুপ, নাইন স্টার, রুট থ্রি, বাবলা গ্রুপ, টুয়েলভ স্টার, সুপার সিক্সটিন, পাওয়ার হোল্ডার, ডেনজারাস এলিভেন, দুর্ধর্ষ ৯, মিশন ভিশন, হরর গ্রুপ ইত্যাদি। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর আদনান কবীর ডিসকো গ্রুপ কর্তৃক নিহত হয়। আদনান কবীর নিজেও নাইন স্টার গ্যাং-এর সদস্য ছিল। পালটাপালটি গ্রুপিং-এর কারণে তার মৃত্যু হয়। বরিশালের কিশোর গ্যাং-এর হাতে খুন হয় ১৫ বছর বয়সি কিশোর হৃদয়। বিগত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনিপাড়ায় কিশোর গ্যাং-এর হাতে নিহত হয় ওয়ার্কশপ কর্মী আব্দুল আজিজ। ১৫ জানুয়ারি রূপনগরে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে একটি কিশোর গ্যাং। চলতি বছরের ১৪ মে ভাসানটেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিশু ধর্ষণ হয় ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরের কাছে যা একটি অশনিসংকেত সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য। বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে এক কিশোরকে নতুন মডেলের গাড়ি কিনে না দেয়ায় সে তার বাবা ও মায়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো নিকৃষ্ট অপরাধ সংগঠিত করে।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের শিশু আইন অনুযায়ী ৯ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের কোনো শিশু অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো উচিত। বাংলাদেশে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র আছে দুইটি। একটি গাজীপুরের টঙ্গীতে অন্যটি যশোরের পুলেরহাটে । পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা, পারিবারিক অনুশাসনহীনতা, সামাজিক এবং সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করা, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, বিদেশি সাংস্কৃতির অনুপ্রবেশসহ ইত্যাদি নানা কারণে কিশোররা বিপথে ধাবিত হচ্ছে। শুধু তাই না বস্তিতে বসবাসকারী ভ্রাম্যমাণ কিশোর-কিশোরীরাও গ্যাং তৈরি করে ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, চুরি ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ছে।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছে, ‘পারিবারিক বন্ধন শিথিল, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব তৈরি এবং খেলাধুলা থেকে বিরত থাকা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া কিশোর অপরাধ সংগঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই কিশোর গ্যাংদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সর্বদা বাধা দিয়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। কিশোর অপরাধ কমাতে খেলার মাঠ বৃদ্ধি করতে হবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি কিশোরদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে, অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে, কিশোর-তরুণদের গঠনমূলক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত করতে হবে।
লেখক : মো. ওসমান গনি শুভ, শিক্ষার্থী, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।