আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও একটি গল্প - দৈনিকশিক্ষা

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও একটি গল্প

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রাথমিকের বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিপত্র জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এই পরিপত্র সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের ক্ষেত্রে কার্যকর করা দুরূহ। যা অনেকটাই ‘লোম বাছতে চামড়া উঠে যাওয়া’ প্রবাদের মতো। এই পরিপত্র প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্মাচ্ছে। পরিপত্রে সংশ্লিষ্টদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা আড়াল করার প্রয়াসে এ প্রেক্ষাপটে একটি গল্পের অবতারণা করছি। 

এক প্রভাবশালী ব্যক্তির অফিসে কিছু শ্রমজীবী লোক কাজ করে। লোকটি শ্রমজীবীদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করছেন। বিষয়টি তাকে জানানোর পর তিনি বঞ্চিত করার যৌক্তিকতা স্বীকার করলেন। এক পর্যায়ে শ্রমজীবীদের মাঝে আন্দোলনের সুর বেজে উঠল। মালিকপক্ষ অতি শীঘ্রই সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিলেন। কিছুদিন পর মালিকপক্ষ সমাধান দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো। এবার মালিক পরিবর্তনের পালা। নতুন নতুন মালিকের ওপর দায়িত্ব আসলো। নতুন মালিকও এভাবে পাওনা দেই, দিচ্ছি, দেবো বলে সময়ক্ষেপণ করে প্রস্থান করতে লাগলো। অবশেষে লিখিত ও মৌখিকভাবে সর্বপ্রধান কর্তাব্যক্তি জড়িয়ে পড়লো। অবশেষে নতুনভাবে অন্য পক্ষের মাধ্যমে সাফ জানিয়ে দিলেন, এ ন্যায্য মজুরি দেয়া সম্ভব নয়। এ সময় শ্রমজীবী মানুষ আবারও আন্দোলন শুরু করেন।

এখন মালিকপক্ষ আশ্বাস ভুলে উল্টো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হুমকি দিচ্ছেন। এ আইনগত ব্যবস্থা খুবই নির্মম। বরং এ হটকারী কর্মকাণ্ড মালিকপক্ষকে শ্রমজীবী মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করবে। অনেকটা বাঘ ও রাখালের গল্পের মত অবিশ্বাস স্থাপন হবে। একবার অবিশ্বাস স্থাপন হলে পরবর্তী সময়ে আস্থা আনা দুরূহ হবে।

এ গল্পের সাথে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের সাদৃশ্য বিদ্যমান। শুধু আশ্বাসে আশ্বাসে বেতন বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর সময়ক্ষেপণ করা হল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলতে চাই, শিক্ষকেরা রাষ্ট্রের ক্ষমতা পরিবর্তনের আন্দোলন করছে না। তারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণে আন্দোলন করছেন। শিক্ষকদের এ আন্দোলন প্রাথমিকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভয়েস কলে দেয়া আশ্বাস ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের আন্দোলন।

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে সময়ক্ষেপণের দায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারে না। এ সময়ক্ষেপণের ফলে তাদের ওপর প্রাথমিক শিক্ষকদের ১ দফা দাবির সাথে ব্যর্থতার দফা যাতে যুক্ত না হয় সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে অধিকতর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানাই। ব্যর্থতা ঢাকতে আপনারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রীর কার জন্য অপেক্ষা না করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দারস্থ হবেন সে আশা করছি।

প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে হতাশা, ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। ১ দফা দাবিতে সকল প্রাথমিক শিক্ষক আজ ঐক্যবদ্ধ। এ আন্দোলনের যে সব নেতা শিক্ষকদের স্বার্থবিরোধী কাজ করবে তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি। শিক্ষকদের কাছে তিরস্কৃত হয়ে তাদের নেতৃত্ব অকার্যকর হয়ে যাবে। 

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও সচিব মো. আকরাম আল হোসেন দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এসব নেতাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করে শীঘ্রই শিক্ষকদের আস্থা লাভ করুন। এতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। জয় বাংলা, জয় হোক প্রাথমিক শিক্ষকদের। জয় হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা হোক সকলের অঙ্গীকার।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম;ু সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036489963531494