আবরার হত্যা : ক্যাম্পাসে ভয়ের রাজত্ব গড়েছিল ওরা - দৈনিকশিক্ষা

আবরার হত্যা : ক্যাম্পাসে ভয়ের রাজত্ব গড়েছিল ওরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িতরা ক্যাম্পাসে ভয়ের রাজত্ব গড়েছিল। একজনকে মেরে অন্যজনকে শিক্ষা দিতে এবং জুনিয়রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল তারা। যার আচরণ অপছন্দ হতো, ডেকে এনে নানা নির্যাতন করা হতো তাকেই। আবরারের খুনিরা রাজনৈতিক পরিচয়কে শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করে অছাত্রের মতো আচরণ করত। হত্যার মোটিভ কোনো একক কারণ ছিল না। শিবির সন্দেহসহ একাধিক কারণে টার্গেট করা হয়েছিল তাকে। আবরার হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে উঠে আসে এসব তথ্য। দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য তৈরি করা এ হত্যা মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সেক্রেটারি মেহেদী হাসান রাসেলসহ ২৫ জনকে আসামি করে গতকাল বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে ১১ জন সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নেয়। বাদবাকিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করে। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন পলাতক। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে বাকিরা। আসামিদের মধ্যে ১৪ জন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিল। অভিযোগপত্রে বুয়েটের সাত শিক্ষক, ১৩ শিক্ষার্থী, পাঁচ কর্মচারীসহ ৩১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের ৩৭ দিনের মাথায় চার্জশিট দাখিল করায় খুশি আবরারের পরিবারও। এর আগে ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার এক মাস ১৮ দিনের মাথায় চার্জশিট দাখিল করেছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গতকাল আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, 'ওরা এগারোজন (হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া) মিলে বাইড়ে (পিটানো) মারইলো। আমারে বললে ছেলেকে না পড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। জমি চাষ, ব্যবসা করিয়ে ওরে কাছে আগলে রাখতাম। যারা সরাসরি এবং বাইরে থেকে ছেলেকে মেরেছে, তাদের সবার ফাঁসি চাই। এই ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।'

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, 'আবরার হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করলে সব আইনি বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন করে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া সম্ভব। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে জমা দেয়ার পর দায়িত্ব হবে প্রসিকিউশন টিমের। প্রসিকিউশন টিম রেডি রাখার কথা বলেছিলাম, যাতে প্রতিবেদন পৌঁছার পরই তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রসিকিশন টিম রেডি।'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'হত্যার বিচার শিগগির শুরু হবে। বিচার করবেন আদালত। তদন্ত সংস্থা পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে নির্ভুল চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগির বিচারকাজ শুরু হবে। আবরার হত্যা মামলার যেসব আসামি পালিয়ে আছে, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।'

মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, 'এ ধরনের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ আর চাই না। আবরারের মতো এমন একজন মেধাবী ছাত্রের এমন করুণ পরিণতি কোনোভাবে কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন ঘটনায় জড়ানোর সাহস না দেখায় সে জন্য অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।'

বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অন্তরা মাধুরী তিথি বলেন, 'তিনটি দাবিতে একাডেমিক অসহযোগ বলবৎ রয়েছে। তা হলো চার্জশিট দাখিলের পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার। সম্প্রতি তিনটি র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি। বুয়েটে রাজনৈতিক ও র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্তদের ব্যাপারে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে ব্যাপারে বিধিমালা করে অর্ডিন্যান্সে যুক্ত করা। যেহেতু চার্জশিট দাখিল হয়েছে, তাই পরবর্তী করণীয় নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন ডাকা হবে।'

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পেলেই তা বুয়েটের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি তাদের বাকি কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা বুয়েটের শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলা হবে। সেখানেই অভিযুক্ত ছাত্রদের চূড়ান্ত বহিস্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাকে। আবরার হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা। পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে ডিবি। আবরার হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। তিনি নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে নেমে ১০ দফা দাবি তোলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমর্থন প্রকাশ করেন। তাদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এ হত্যার আসামিদের সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।

এজাহারের ১৯ আসামি : আবরার হত্যা মামলার চার্জশিটে মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ জনের সবাইকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলো- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ), এএসএম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ)। আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ থেকে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এজাহারের বাইরের ৬ আসামি : চার্জশিটে মামলার এজাহারের ১৯ জনের বাইরে ৬ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ওই ৬ জনকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলো বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

পলাতক ৪ জন : এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

সরাসরি জড়িত ১১ জন : আবরার হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় ১১ জন। তারা হলো- মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, শামীম বিল্লাহ, এএসএম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, খন্দকার তাবাখ্‌খারুল ইসলাম তানভীর।

জবানবন্দি ৮ জনের : এ মামলায় ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হলো মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং খন্দকার তাবাখ্‌খারুল ইসলাম তানভীর।

হত্যার মোটিভ : আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সহপাঠীরা বলেছিল, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস এবং শিবির সন্দেহে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। অবশ্য চাঞ্চল্যকর ওই মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, একক কোনো কারণে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। আসামিদের বেশির ভাগের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও সেটা শুধু ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক কোনো কারণও নেই। গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'কোনো একক কারণে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়নি। আবরার শিবির করে কি-না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র কারণ। স্ট্যাটাসও হত্যাকাণ্ডের কারণ নয়। মূলত যারা তাকে হত্যা করেছে, তারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। সমষ্টিগত কারণে আবরারকে শায়েস্তা করতে গিয়েই নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা। অনেক কারণের মধ্যে আসামিদের ধারণা ছিল, আবরার শিবির করতে পারে, হিযবুত তাহ্‌রীর করতে পারে।'

মনিরুল ইসলাম বলেন, 'তারা র‌্যাগিংয়ের নামে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখত। কেউ হয়তো সালাম দেয়নি, দেখে হয়তো কেউ হেসেছে, এজন্যও অনেককে পিটিয়েছে তারা। এ ধরনের রুক্ষ আচরণ করতে করতে আবরার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আসামিরা অছাত্রসুলভ জীবনধারণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারা কর্তৃত্ববাদী আচরণ প্রতিষ্ঠা করতে রাজনৈতিক পরিচয়টা ব্যবহার করত।'

যে কারণে হত্যা : আসামিদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও তদন্তে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আসামিরা মনে করত আবরারের আচরণগত সমস্যা ছিল। বড় ভাইদের দেখলে সালাম দেয় না। ডাইনিং রুমেও বড়দের দেখলে তির্যক মন্তব্য করত। অভিযুক্তরা মনে করেছে, আবরার এসব তাদের উদ্দেশ্যেই করেছে।'

তিনি বলেন, 'আসামিরা মনে করেছে আবরার তাদের অবজ্ঞা করে, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে না। কারণ এই আসামিরা বিভিন্ন সময়ই ছাত্র হলে অরাজকতা করেছে। তাদের যেন সবাই ভয় করে, আনুগত্য প্রকাশ করে, এজন্য বিভিন্ন সময় অনেককে এরা পিটিয়েছে। নতুন ব্যাচের ছাত্রদের দেখানোর জন্যও জুনিয়র কোনো ছাত্রকে ধরে এনে সামান্য কারণেও পেটাত তারা। মূলত এসব কারণের সমষ্টিতেই আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।'

মনিরুল বলেন, যে কারণেই হত্যাকাণ্ড হোক, জড়িত সবাইকে আসামি করা হয়েছে। অনেকে ঘটনাস্থলে ছিল না; কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে ছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা পেয়ে তাদেরও চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই তদন্তে প্রত্যেক আসামিই সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। যারা সম্ভাব্য অপরাধী, যারা উচ্ছৃঙ্খলতা করে, তাদের কাছেও এই তদন্ত, এই চার্জশিট মেসেজ হিসেবে কাজ করবে। সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবস্থান, ধর্মীয় বা লিঙ্গভিত্তিক অবস্থান, যার যেটাই হোক, আইন অমান্য করলে, অপরাধ করলে আইনের আওতায় আসতেই হবে। এটা ভবিষ্যতের শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখছে পুলিশ :তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বুয়েটের প্রশাসন ও শেরেবাংলা হলের প্রশাসন যদি সতর্ক থাকত, আগে থেকে মনিটর করত, তাহলে হয়তো এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটত না। তারা আবরার হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছেন, এই আসামিরা রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে নানা অপরাধ করেছে। কিন্তু হল প্রশাসন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা প্রতিরোধ করতে পারেনি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেনি বা সহায়তাও চায়নি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক হলে হয়তো এমন নৃশংস ঘটনা ঘটত না। যদিও এটা হত্যা মামলার তদন্তের অংশ ছিল না। তবুও সার্বিক বিবেচনায় হল কর্তৃপক্ষের এক ধরনের ব্যর্থতা দেখেছি।' তিনি বলেন, এই ব্যর্থতার বিষয়ে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে, ব্যবস্থা নেবে।

তিনি জানান, তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন, রাত ১০টার পর থেকে আবরারের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে পেটানো হচ্ছিল তাকে। আবরারকে হয়তো একটু আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমন নৃশংস পরিণতি হতো না। পুলিশ খবর পেয়েছিল ৩টার পর। ঘটনাস্থলে গেলেও বলা হয়েছে, সব ঠিক আছে। তার আগেই আবরার মারা যায়। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আবরার হত্যাকাে র ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তদন্ত সহায়ক দল ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের তথ্য রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পাওয়া তথ্যের বিশ্লেষণ, পাশাপাশি আট আসামির জবানবন্দিও হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় প্রমাণ করে। যদিও এ ধরনের ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু তারা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছেন, তাতে সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন।

ভয়াবহ নির্যাতন : তদন্তে উঠে আসে, আবরারকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের একটি গ্রুপ ৪ অক্টোবর শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিনে একটি মিটিং করে। এরপর হলের গেস্টরুমে আবরার ইস্যুতে মিটিংয়ে বসে তারা। ৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে 'বড় ভাইদের' নির্দেশে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে আবরারকে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্য মুনতাসিরুল আল জেমি ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম। মেঝেতে বসিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হলে কেউ বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কি-না তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে আবরারের ওপর চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। এক পর্যায়ে আবরার বমি করতে থাকে। তখন তাকে নেওয়া হয় ২০০৫ নম্বর কক্ষে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিচতলায় নামানোর চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ের কাছে ফেলে রাখা হয়। পরে বুয়েটের চিকিৎসক এসে হলের করিডোরে মৃত ঘোষণা করেন তাকে। আবরারের ওপর নির্যাতনে বড় ভূমিকা ছিল অনিক সরকারের। তাকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় সে। তার সঙ্গে অন্যরা যোগ দেয়। স্কিপিং রোপ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল। সেই ভয়ংকর বিবরণ উঠে এসেছে অনেকের জবানবন্দিতে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, 'যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে তারা সবাই হত্যাকাণ্ডে নানাভাবে জড়িত ছিল। তাই সবার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও অনেক ধারা যুক্ত হয়েছে।'

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071170330047607