আবরার হত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিবর্তন এসেছে? - দৈনিকশিক্ষা

আবরার হত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিবর্তন এসেছে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার কাছে দুপুরে কয়েকজন ছাত্রকে দেখা যায় জাস্টিস ফর আবরার লেখা একটি ব্যানারে নানা মন্তব্য লিখছেন। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর এক মাস উপলক্ষে এই শিক্ষার্থীরা অঙ্গীকার করছেন এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সানজানা চৌধুরী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত মাসে আবরাব হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কীভাবে সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল, তার অনেক অভিযোগ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

পরে বুয়েটসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা এরকম নির্যাতন বন্ধ এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এধরণের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েট প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের করলেও এই একমাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশে আদৌ কি কোন পরিবর্তন এসেছে?

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য

এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের জোয়ারে মানুষদের মানসিকতায় বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোনামি মোস্তাক।

"আগে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন অন্যায় হলে, কথা বলতে চাইতো না। বুয়েটের হলে যে এ ধরণের নির্যাতন হতো, এটা বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীই জানতো না। এখন তারা সব জানতে পারছে। আর এই এক মাসে বলার যে একটা সাহস হয়েছে এটাই তো অনেক বড় পরিবর্তন। এরপরে আর কোন অন্যায় হলে এখন তারা সেটার বিরুদ্ধে বলতে পারবে।"

তবে একই বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তরা মাধুরী তিথি এক মাসেও কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখেননি। তার আশঙ্কা আন্দোলন শিথিল হয়ে আসায় প্রশাসনও দায়সারা ভূমিকা নিয়েছে।

সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটার ব্যাপারে দ্রুত সুষ্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।

"এখন আমরা জানতে চাই যে কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাদের শাস্তি কী হবে। একটা সুস্পষ্ট নীতিমালা চাই। আমরা অপেক্ষা করছি চার্জশিট পর্যন্ত। সে পর্যন্ত প্রশাসনকে আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে রাখছি।"

"এতদিনে তো তদন্ত আগানোর কথা। এখন আমরা দেখবো, ওনারা ওই কাজ কতোটা জলদি করতে পারে। যদি ওনারা সময় মতো কিছু করতে না পারেন, তাহলে আমরা বুঝবো যে তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের পরবর্তীতে কঠোরতর ব্যবস্থা নিতে হবে।"

"ছাত্রলীগের দাপট কমেনি, উল্টো বেড়েছে"

প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসুর সহ-সভাপতি নুরুল হক নুর।

তার অভিযোগ আবরারকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতার অপব্যবহারকে স্পষ্ট করলেও প্রশাসন এই বিষয়টিকে নজরে আনছে না।

ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন হলেও তারা এখনও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের দমন পীড়ন করছে বলে তিনি জানান।

"বুয়েটের মতো একটা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলল, সারা দেশে নাড়া দিল। আমরা ভেবেছিলাম ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী চরিত্রের একটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমরা দেখেছি তার উল্টোটা হয়েছে।"

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ টেনে মি. নুর বলেন, "এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজশাহীর পলিটেকনিকে একজন শিক্ষককে ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঞ্ছিত করলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির অপসারণের ব্যাপারে যে আন্দোলন চলছে সেখানেও এই ছাত্রলীগ ওই ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। সুতরাং আমার মনে হচ্ছেনা, যে দাবিতে সারা দেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছিল, সেই ছাত্রলীগের কার্যক্রমে ন্যূনতম পরিবর্তন এসেছে।।"


ক্যাম্পাসে সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?

যে ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ উঠছে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শুধু আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ।

তার মতে, ছাত্র সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় দলের প্রভাবমুক্ত না হওয়ায় একের পর সহিংস ঘটনাগুলো ঘটছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি সেইসঙ্গে বিচার ব্যবস্থায় গতি আনা গেলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব বলে তিনি আশা করেন।

"বিচার পাওয়ার জায়গাটা আমাদের অনেক দেরি হয়ে যায়। এখানে ওই প্রক্রিয়ার একটা অনুকরণই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা রাজনীতিকরণেরই ফল। বিচার ব্যবস্থা সেইসঙ্গে প্রশাসনিক কর্মক্ষমতায় গতি আনতে হবে।"

যারা দাপট দেখিয়ে চলছে তাদের সেই ক্ষমতার নিশ্চয়ই কোন উৎস বা সাহায্য আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অভিযুক্ত ছাত্র সংগঠনের পেছনে যে শক্তি বিরাজমান, সেই শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সাধারণ মানুষ সেটা পারবেনা। তারা শুধু প্রতিবাদ করতে পারবে। বিষয়টা দৃষ্টিগোচর করে নিয়ন্ত্রণ আরোপের দায়িত্ব রাষ্ট্রের।"


আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলন বন্ধ রাখলেও মামলার চার্জশিট না দেয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন রেখেছেন।

সামনের সপ্তাহের শুরুতে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দেয়ার কথা রয়েছে।

এতে আসামী হতে পারেন গ্রেফতার ২১জন সহ ২৪ জন। যাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.024232864379883