বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২১ মে) মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এ জন্য ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ জুন নতুন দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কাজী শরিফুল ইসলাম। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হওয়া ও পথচারী সিমথিয়া সুলতানা মুক্তা আহত হওয়ার ঘটনায় সু-প্রভাত বাসের মালিক-চালকসহ চার জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছি।
তিনি আদালতকে আরও জানান, মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের পর আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও আসামি জড়িত আছে। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়। সে মতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অধিকতর তদন্ত করা প্রয়োজন।
২৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পৃথক দুটি চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা কাজী শরিফুল ইসলাম। দুই চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ৩২ জনকে।
আবরার নিহতের ঘটনায় বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছির আরাফাত ও মালিক ননী গোপাল সরকারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২৭৯/৩০৪/১০৯ ধারায় চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে, ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম ও তার সহকারী ইব্রাহিম হোসেনকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এছাড়া পথচারী সিমথিয়া সুলতানা মুক্তাকে আহত করায় বাস চালক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী ইব্রাহিম হোসেন, কন্ডাক্টর ইয়াছির আরাফাত ও মালিক ননী গোপাল সরকারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২৭৯/৩৩৮-ক/১০৯ ধারায় আরেকটি চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এ মামলায় বাসচালক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী ইব্রাহিম হোসেন, কন্ডাক্টর ইয়াছির আরাফাত ও মালিক ননী গোপাল সরকার কারাগারে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
উল্লেখ্য ১৯ মার্চ সকাল ৭টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন প্রগতি সরণি এলাকায় সু-প্রভাত পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) চাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হন। সেদিন রাতেই আবরারের বাবা ব্রি. জেনারেল (অব.) আরিফ আহাম্মেদ চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম, হেলপার ইব্রাহিম হোসেন, কন্ডাক্টর ইয়াছির আরাফাত ও মালিক ননী গোপাল সরকারকে (মামলা নং ৩০, ধারা পেনাল কোডের ২৭৯/ ৩৩৮ (ক)/৩০৪/ ও ১০৯।
মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, ‘বাসটির চালক বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে বাড্ডার দিক থেকে প্রগতি সরণি রোড দিয়ে কুড়িলের দিকে যাওয়ার পথে গুলশান থানাধীন শাহাজাদপুরের বাঁশতলায় পথচারী সিমথিয়া সুলতানা মুক্তাকে (২০) চাপা দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আবারও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে গুলশান থানাধীন প্রগতি সরণিতে জেব্রা ক্রসিং পার হওয়ার সময় আমার ছেলে আবরারকে চাপা দেয়। এ সময় বাস তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে তার মাথা থেঁতলে মগজ বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে সে মারা যায়।’