টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে বলে ধারণা করছে ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইআইইউ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ইআইইউ। ডিসেম্বরের শুরুতে সর্বশেষ বাংলাদেশ বিষয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটিই জানিয়েছে বৃটেনের প্রভাবশালী এই ম্যাগাজিনটি।
ইকনোমিস্ট গ্রুপের গবেষণায় এর কারণ হিসেবে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃণমূলের সমর্থন আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
ইকনোমিস্টের মতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতির পাশাপাশি ভোটের মাঠে একটি কার্যকর বিরোধী শক্তির অনুপস্থিতির কারণে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ গড়ে তুলতে পারবে না।
২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময় বিশ্লেষণ করে ইআইইউ গবেষণায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলা, বিরোধী দলের আন্দোলন এবং জনতার বিক্ষোভের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইআইইউর পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আগামী পাঁচ বছরও অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে গড়ে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও ভোগ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগপ্রাপ্তি অব্যাহত রাখা, এবং দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বাড়াতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী বছরগুলোতেও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। আর এ সংকট আগামী কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই টানাপোড়েন আরও চলবে। আর এ সংকটকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের আশু কোনো সম্ভাবনাও ইআইইউ দেখছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে পাঁচ বছরের পূর্বাভাস ইআইইউ দিচ্ছে, তার প্রথম ভাগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি বড় একটি সমস্যা হিসেবেই থেকে যাবে বলে তারা মনে করছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীন সব সময় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ২০১৯-২০২৩ পর্যন্ত সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তবে আসামের নাগরিকপঞ্জির ঘটনায় বাংলাদেশে কিছুটা অস্থিরতা বাড়বে। অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বভাবতই পেছাবে। কারণ আগামী বছরের মাঝামাঝি ভারতে নির্বাচন। এর আগে বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না। এরপরই ভারত ও বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারে।
ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। এই সময়ের মধ্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত প্রকল্প বাড়বে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জয় পেলে আগামী দিনগুলোতে বঙ্গোপসাগরের তীরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত, চীন ও জাপানের কাছ থেকে আরও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে বলে ইআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে লাভবান হবে বাংলাদেশ। আর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। তবে এসব তেলসমৃদ্ধ দেশে বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তি থাকায় প্রবাসী আয় বাড়বে।