কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রায় দুই হাজার ছাত্রীর জন্য একটি আবাসিক হল থাকার কারণে এ সংকট দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে সংকট নিরসনের জন্য নতুন ছাত্রী হলের কাজ শুরু হলেও নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার ছাত্রী। ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে মাত্র একটি। একমাত্র আবাসিক হল নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে প্রশাসন থেকে ৩০৩টি সিট থাকার কথা বলা হলেও অধিকাংশ সিটে দু'জন থাকার মাধ্যমে এ সংখ্যার হিসাব দাঁড় করানো হয়েছে। আবাসিক হলের কয়েকটি রুম বাদে প্রায় সব রুমে শিক্ষার্থীদের চারটি সিটে ছয়জন করে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা দুই সিটে চারজন ও বাকি দুই সিটে দু'জন সিনিয়র শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এত কষ্ট করে থাকার পরও প্রশাসন নতুন হল নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করছে না।
হলে আসন সংকটের বিষয়ে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, হলে আবাসিক সংকট খুব বেশি। বর্তমানে হলে সিটের জন্য প্রায় ২৫০টি আবেদন জমা পড়েছে; কিন্তু আমাদের হলে সিট ফাঁকা রয়েছে মাত্র ২৭টি। সিট ফাঁকা না থাকার কারণে আমরা ইচ্ছে করলেও সবাইকে হলে সিট দিতে পারছি না।
অন্যদিকে অধিকাংশ ছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের মেস ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। যেখানে নিরাপত্তা সংকট ও বাড়তি ভাড়াসহ নানা সমস্যায় ভুগতে হয় শিক্ষার্থীদের। হলে সিট না পাওয়া ছাত্রীরা জানান, হলে সিটের জন্য আবেদন করেছি অনেক দিন আগে; কিন্তু সিট খালি না থাকায় উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আবাসিক সংকটের বিষয়টি চিন্তা করে নতুন হলের কাজ শুরু করলেও সে কাজ চলছে ধীরগতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মেসে থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজা মিম বলেন, হলে সিট না পাওয়ার কারণে মেসে থাকতে হয়। এখানে নিরাপত্তা কম থাকার পাশাপাশি তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
ছাত্রীদের আবাসন সংকটের কথা বিবেচনা করে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে 'শেখ হাসিনা হল' নামে নতুন একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়; কিন্তু কাজ শুরুর দু'বছরে নির্মাণ কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। নির্মিত ভবনে মাত্র দোতলা পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রী হলের কাজ পাওয়া ঠিকাদার একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবনের নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত। একসঙ্গে দুটি ভবনের কাজ করতে গিয়ে কোনোটাই দ্রুত শেষ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসন থেকে বারবার চাপ দেয়া হচ্ছে। তারা জনবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ ধীরগতিতে করছেন। নির্মাণাধীন হলটির কাজ শেষ হলে ছাত্রীদের আবাসন সংকট অনেকটা কমে আসবে।