পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাব, পাঠদানে ঘাটতি, পরিবহনব্যবস্থা না থাকা, ছাত্রীদের জন্য নামমাত্র কমনরুম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম তেমন না থাকাসহ বহুমুখী সংকটে আছে আবুজর গিফারী কলেজ। কলেজের সামনের রাস্তায় সংস্কারকাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (১০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, রাজধানীর মালিবাগে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি পাস কোর্স, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ছাড়াও বিবিএ প্রফেশনাল বিষয়ে পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। শিক্ষক আছেন ৭১ জন। সম্প্রতি কলেজে গিয়ে নানা দুরবস্থার চিত্র দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতিবছর দুই শর কম শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রিতে নানা বিভাগ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী আছে। অনেক শিক্ষার্থীই অন্য কোথাও সুযোগ না পেয়ে এই কলেজে আসে। আর শিক্ষকরাও খুব একটা আন্তরিক নন।’
সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিয়মিত ক্লাস হয় না। এ জন্য ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কিন্তু কলেজ প্রশাসন সব কিছু জেনেও নীরব ভূমিকা পালন করছে।’
মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জয় বলেন, ‘কলেজের বেশ কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থীরা হতাশ। তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্লাস সংকট, কলেজে আসার রাস্তার দুরবস্থা এবং পরিবহন। ক্লাসরুম সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে চলা যায় না।’
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা অনেক দূর থেকে আসেন। তাঁদের যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করলে কষ্ট কিছুটা কমত।’
জানা যায়, কলেজের পরীক্ষার ফল নিম্নমুখী হচ্ছে দিন দিন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে মোট ৬৩৭ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই পাঁচটি পরীক্ষার ফল ঘেঁটে দেখা যায়, ৬৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র দুজন (একজন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং অপর জন ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে)। আর অকৃতকার্য হয় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিক্ষার্থী, ২১৬ জন। এর মধ্যে শেষ দুই বছরে উচ্চ মাধ্যমিকে ১১৮ জন শিক্ষার্থী ফেল করে।
চলতি বছর ১৭২ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ১১০ জন। পাসের হার ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর ব্যবসায় শিক্ষায় ৭১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করে ৩২ জন, মানবিক শাখায় ৬২ জনের মধ্যে ফেল ২২ জন এবং বিজ্ঞান শাখায় ৩৯ জনের মধ্যে ফেল করে আটজন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিজ্ঞান শাখায় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ২৫ জন (জিপিএ ৫ মাত্র একজন), ব্যবসায় শিক্ষায় ৮৩ জনের মধ্যে পাস ৬৪ জন এবং মানবিকে ৩৭ জনের মধ্যে পাস করে মাত্র ১০ জন।
ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি শাহরিয়ার আলম ফাহাদ বলেন, ‘আমাদের আটতলা একটি ভবন হয়েছে। কিন্তু লিফট না লাগানোয় শিক্ষার্থীদের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে-নামতে হয়। এ ছাড়া আরো কিছু সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান দরকার।’
জানা যায়, ১৯৯৫ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলেজটিতে শিক্ষার্থী ছিল ১০ হাজারের বেশি। অথচ তখন বিভাগ ও বিষয়ের সংখ্যা ছিল কম। এখন ছয়টি বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স থাকার পরও শিক্ষার্থী সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। কলেজটিতে একসময় মূলত উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীরা বেশি পড়ত। কিন্তু এখন উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। পড়ালেখার অবস্থা বর্তমান গতিতে চললে সামনে শিক্ষার্থী আরো কমবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
কলেজের অধ্যক্ষ শিরিন আখতার বানু বলেন, ‘আমাদের শ্রেণিকক্ষের কিছুটা সংকট তো আছেই। শিক্ষকদেরও বসার জন্য জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। এরই মধ্যে আমরা এক কোটি ২৫ লাখ টাকার বাজেট পেয়েছি। একটি ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে, আরেকটির আটতলা ফাউন্ডেশনের কাজ শিগগির শুরু হচ্ছে। ওই ভবনটি নির্মিত হলে শিক্ষার্থীদের আর ক্লাস সংকট থাকবে না।’ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। জাতীয় বিতর্কসহ বেশ কিছু প্রগ্রামে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। এ ছাড়া আমাদের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব রয়েছে।’