আমরা এ কোন সৃজনশীলতা চালু করলাম? - দৈনিকশিক্ষা

আমরা এ কোন সৃজনশীলতা চালু করলাম?

মাছুম বিল্লাহ |

সৃজনশীলতার সঠিক কোন সংজ্ঞা নেই। তবে এটা বোঝা যায় যে, সৃজনশীলতা চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় পড়ে তার ওপর মন্তব্য করতে পারবে। বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তর্ক উত্থাপন করতে পারবে। নিজের মতামত যুক্ত করতে পারবে। সদৃশ কোন উদাহরণ দিতে পারবে। যোগ বিয়োগ করে একটি উপসংহার টানতে পারবে এবং সবশেষে একটি বিচারিক মতামত দিতে পারবে। অর্থাৎ পাঠক কিংবা শ্রোতা বুঝতে পারবেন যে, লেখক বা বক্তা বিষয়টির ওপর চিন্তা করেছেন, সংশ্লেষন ও বিশ্লেষণ করেছেন, নিজের মতামত ও উদাহরণ দিয়ে সেটিকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণীয় করেছেন পাঠকের কাছে, শ্রোতার কাছে এবং সর্বোপরি একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সৃজনশীলের বিষয়টি মোটামুটি এই ধরনের হওয়ার কথা। এবার দেখা যাক আমাদের দেশে প্রচলিত সৃজনশীল প্রশ্নের কিছু নমুনা।

উচ্চ মাধ্যমিকে হৈমন্তী নামক রবিঠাকুরের লেখা একটি ছোটগল্প পাঠ্য আছে। এটির ওপর  সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক লেখা হয়েছে এভাবে : পোস্টমাস্টার গল্পে রতন একদা পোস্টমাস্টারকে পেয়ে সজীব হয়ে উঠলেন। রান্নাবান্না করাসহ রতন পোস্টমাস্টারের কাছে বর্ণমালা শিখে, পাঠ্যবই পাঠ করতে শেখে। রতনের চরিত্রের কয়েকটি বণর্না দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ একদিন পোস্টমাস্টার বদলি হয়ে চলে যাবেন। যাওয়ার সময় রতনের মন খুব খারাপ, কিন্তু তাকে যেতেই হবে। উদাস রতন একাকী দাওয়ায় বসে আছে। যাওয়ার সময় পোস্টমাস্টার রতনকে বললেন, থাকবে রতন, পৃথিবীতে কে কাহার? উদ্দীপকের পরের প্রশ্নগুলো হচ্ছে এরকম (ক). হৈমন্তী গল্পের লেখক কে? (খ). হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য আসলে দায়ী কে? (গ). উদ্দীপকের রতন চরিত্রের সঙ্গে হৈমন্তীর চরিত্রের মিল কতটুকু তা ব্যাখ্যা কর (ঘ). তোমার পঠিত হৈমন্তী গল্পে গৌরী শংকর চরিত্র পোষ্টমাস্টার চরিত্রের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কি পোস্টমাষ্টার পড়তে বলা হয়েছিল, বা এটি কি সহকারী ম্যাটেরিয়ালস হিসেব পড়ানো হয়েছে বা আমাদের শিক্ষকগণ কি তাদের পড়ানোর সময় এভাবে তুলনা করে পড়ান? আমরা জানি, ওপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর হাঁ-বোধক হবে না। আর তাই পরীক্ষার্থীরা খাতায় আবোল তাবোল লিখে আসে, তাতে নম্বরও পেয়ে যায়। হয় না সঠিক মূল্যায়ন। আর একটি উদাহরণ দেখা যাক। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের এইচএসসি জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল এভাবে---রফিক গ্রামের বাড়িতে যায়। অসাবধানতবশত তার হাত কেটে রক্তপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর রক্ত পড়া হয়।’ এটি হলো সৃজনশীল পদ্ধতিতে উদ্দীপকের অনুধাবনমূলক একটি প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর জানতে বলা হয়---’উদ্দীপকের রক্তপাত বন্ধের কৌশলটি বর্ণনা কর।’ 

মূলত এই প্রশ্নের উত্তর রক্ত জমাট বাঁধার যে চারটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একজন জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ওই বছর ২০৫টি খাতা পরীক্ষণ করেছেন, তাদের মধ্যে সাতজন পরীক্ষার্থী এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। অন্য পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগ অপ্রাসঙ্গিক উত্তর লিখেছে। অনেকে লিখেছে---’রফিক হাত চেপে ধরেছিল বলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে।’ 

সম্প্রতি একটি দৈনিকে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার এই উদ্দীপকের নমুনা তুলে ধরে বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য রক্ত জমাট বাঁধার চারটি বৈজ্ঞানিক কারণ জানা অত্যাবশ্যক। এখন সৃজনশীল প্রশ্ন না করে যদি সরাসরি রক্ত জমাট বাঁধার কারণ বর্ণনা করতে বলা হতো, তাহলে ৫০ শতাংশ পরীক্ষার্থী সঠিক উত্তর দিতে পারত। অন্যদের কেউ তিনটি, কেউ দুটি বা একটি কারণ লিখতে পারত। অপ্রাসঙ্গিক উত্তর কেউ দিত না। বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ্য বইয়ের অপরিহার্য বিষয়গুলো হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। 

শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু কতটা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছে, তা যাচাই করতে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করে সরকার। এই পদ্ধতিতে বলা হয়, পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন থাকবে, সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কোন ধারণা থাকবে না। প্রশ্ন থাকবে নির্দিষ্ট সিলেবাস থেকে এবং তারা নিজেদের মতো করে উত্তর লিখবে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। এখন যা হচেছ তা হলো -শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রশ্ননির্ভর ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অসম্পুর্ণ জ্ঞান অর্জিত হচ্ছে আর পাঠ্যবই পড়া বা পড়ানো হচ্ছে না। 

বলা হয়েছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ ও যোগ্য একদল শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল পদ্ধতির সুফল পাবে। কিন্তু রিসার্চ ফল অ্যাডাভন্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনের (রেইস) জরিপ থেকে থেকে জানা যায়, মোট শিক্ষার্থীর এক-চতুতাংশই পরীক্ষার প্রশ্ন বুঝতে অক্ষম। তাদের কাছে কঠিন মনে হয় বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজির মতো বিষয়গুলো। অরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই গাইড বইনির্ভর। তাদের দুই তৃতীয়াংশ সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার জন্য গৃহশিক্ষকের সাহায্য নেয়। অন্যদিকে শিক্ষকদের মাত্র ৪৫শতাংশ এ পদ্ধতি বোঝে , ৪২শতাংশ অল্প বোঝে, ১৩ শতাংশ এ পদ্ধতি বুঝতেই পারেনি। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় সৃজনশীল পদ্ধতি এই পদ্ধতিতে পাঠ্য বইয়ে যে মূল পাঠ রয়েছে, এর থেকে প্রশ্ন না করে এরই মূলভাবের আলোকে বাইরের দৃষ্টান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেই দৃষ্টান্ত থেকে জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমুলক, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা-এই চারটি স্তরে বিন্যাস করে প্রশ্ন করা হয়। শিক্ষার্থীরা মূল পাঠের দৃষ্টান্ত অনুসরণে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। আগে মূল পাঠ থেকে পাঠ্য বইয়ে প্রশ্নপত্র থাকত। শিক্ষকরা পরীক্ষার সময় তা দেখে প্রশ্ন তৈরি করতেন। কিন্তু বর্তমানে নমুনা প্রশ্ন থাকে মাত্র একটি। পাঠ বিশ্লেষণ করে বাইরের দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রশ্ন করার কারণে সময় নিয়ে উদ্দীপক তৈরি করতে হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি কোনভাবেই অত্মস্থ করতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষার্থীদেরও তারা ভালভাবে বোঝাতে পারছেন না। 

২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং শাখার ’একাডেমিক তদারকি প্রতিবেদন’ জানিয়েছে, মাধ্যমিক স্কুলের ৫৪শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেননি। তাদের ২২ শতাংশের অবস্থা খুবই নাজুক। বাকিরা এ সম্পর্কে যে, ধারণা রাখেন, তা দিয়ে অংশিক প্রশ্নপত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেরও একই চিত্র পাওয়া গেছে। সরকারি হিসাবেই এখনো ৪১ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না। প্রশ্নও করতে পারেন না। তাহলে তাদের কাছে যেসব শিক্ষার্থীরা পড়ছেন তারা কি বোঝে? রাজধানীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি অধিকাংশ শিক্ষকই বোঝেন না। ফলে তারা নোট গাইড থেকে প্রশ্ন করেন। শুধু নাম-স্থান ঘুরিয়ে দিলেই হয়ে যায় নতুন প্রশ্ন। শিক্ষার্থীরাও নোট-গাইড পড়ে। পাবলিক পরীক্ষায় কিন্তু কোন সমস্যা নেই। লিখলেই পাস, এটাই নিয়ম। কিন্তু যে শিক্ষার্থী সৃজনশীল পদ্ধতির কিছুই বোঝে না, সে আবোলতাবোল লিখে খাতা ভর্তি করে রাখে। তাদেরও পাস করাতে হয়। 

মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের একাডেমিক তদারকি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭ হাজার ৩৫৮ বিদ্যালয় সুপারভিশন করে জানা যায় যে, ৪১শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারেন না। ৫৯ শতাংশ পারেন। অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন ২৫ দশমিক ৯৯ ভাগ শিক্ষক। আর বাইরে থেকে প্রশ্ন প্রণয়ন করেন ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষক। সাত হাজার ৩৫৮টি তদারকি করা বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে সৃজনশীলে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৫৪ হাজার ১৯৬ জন। সর্বাধিক খুলনা অঞ্চলের ৭৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শিক্ষক নিজেদের প্রশ্ন নিজেরা করতে পারেন। আর সর্বাধিক পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল অঞ্চল। এই অঞ্চলের মাত্র ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন। 

অর্থাৎ ৭৩ দশমিক ৩৯শতাংশ শিক্ষকই সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝে না। ঢাকা অঞ্চলের ৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৩২ দশমিক ৩১ শতাংশ, সিলেট অঞ্চলের ৪২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, রংপুর অঞ্চলে ৪২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, রাজশাহী অঞ্চলের ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ  এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ৪৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। মাউশির মহাপরিচালক বলেন, ‘সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে আগে শিক্ষকদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিন দিনের এই প্রশিক্ষণ খুব একটা কার্যকরী হয়নি। ফলে সম্প্রতি নতুন করে আরো এক হজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হয়েছে। যারা এখন সৃজনশীল পদ্ধতি বিষয়ে তিন দিনের পরিবর্তে ছয় দিনের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া আরো কীভাবে সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষ করে তোলা যায়, তা নিয়েও নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচেছ।’  

সৃজনশীলতা বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম ( সেসিপ) নামের একটি প্রকল্প। এ ছাড়া মাউশি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা থেকেও সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। তাদের মধ্যে কতজন সৃজনশীল প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এর সঠিক হিসাব কারো কাছে নেই। তবে সেসিপ প্রোগ্রাম থেকে স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে পরীক্ষা পদ্ধতি উন্নয়ন বিষয়ে দুই লাখ ২৪হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ চলমান। এছাড়া ২০১৪ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৬০ হাজার ৭৭০ জন শিক্ষককে সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 

জানা যায় এই প্রশিক্ষণেও রয়েছে অনেক ফাঁকি। কারণ সৃজনশীল প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমে তৈরি করা হয় মাস্টার ট্রেইনার। এই মাস্টার ট্রেইনাররাই মূলত শিক্ষকদের তিনদিনে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মাষ্টার ট্রেইনাররাই ঠিকমতো সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাঁরা কিভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।এ ছাড়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই পার্টটাইম শিক্ষক রয়েছেন, তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়নি। তারা কিভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াচ্ছেন বা মুল্যায়ন করছেন? তাই দেখা যায় আট বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে, অথচ অর্ধেকেরও কম শিক্ষককে নামকা ওয়াস্তে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাও তিন দিনের। এই স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে তাদের অনেকেরই বিষয়টি সম্পর্কে না জানারই কথা। তাই জোড়াতলি দিয়েই চলছে এই সৃজনশীলতা। শিক্ষকতা পেশায় যারা আছেন, তাদের সকলের ধারণক্ষমতা বা মেধা বা লার্নিং একই ধরনের হওয়ার কথা নয়। অথচ সৃজনশীলে প্রশিক্ষণ যতটুকু হয়েছে, তা সবার জন্য একই ধরনের। দক্ষ ও অদক্ষ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ আলাদাভাবে না করলে সকলেই তা বুঝবে না, এটিই স্বাভাবিক।সবাই দ্রুত আত্মস্থ করতে পারে না বিষয়গুলো। 


’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজন করে ‘বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন: শিক্ষায় করণীয়, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনের জাতীয় সেমিনারে মূল প্রবন্ধে আইআইআরের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, ’সৃজনশীলতাকে আমরা যেভাবে বলছি, আসলে কি তাই? একজন মানুষ কি সব বিষয়ে একসঙ্গে সৃজনশীল হতে পারে? সৃজনশীলের নয়টি ডাইমেনশনের মধ্যে লেখনী একটি। আমাদের দেশে কেন শুধু লেখনী দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর পুরো সৃজনশীলতা বিবেচনা করা হবে?’ এই বিষয়টি কিন্তু আমরা কেউ ভেবে দেখিনি অথচ অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এক অফিস আদেশে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই আদেশে যেসব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এখনো নিজেরা সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারে না তাদের চিহ্নিত করে এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দিতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এখনও গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আর প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসান সৃজনশীলতা সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন,‘আগামী প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে। এ জন্য তাদের থাকতে হবে সৃজনশীলতা, ক্রিটিক্যাল চিন্তা করার দক্ষতা, অনিশ্চয়তার মধ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস ও দলীয়ভাবে কাজ করার যোগ্যতা। এসবের জন্য শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে অনেক অনেক বেশি দলীয় কাজ, সমস্যা সমাধানেরর জন্য তৈরি করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, কেবল মুখস্থ করার মাধ্যমে সৃজনশীলতার বিকাশ হয় না এবং পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে অজানা একটি বিষয়ে লিখতে দেওয়ার নামও সৃজনশীলতা নয়। এই বয়সে একজন শিশুকে ঠিকমতো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, আনন্দ-ফুর্তি করতে না দিলে তার মধ্যে সৃজনশীলতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কিছুই গড়ে ওঠে না।’


লেখক : শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও গবেষক

[মতামতের জন্য সম্পাক দায়ী নন]


 
 

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033578872680664