আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেন সেরা হচ্ছে না? - দৈনিকশিক্ষা

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেন সেরা হচ্ছে না?

এসএম নাদিম মাহমুদ |

প্রতি বছর সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিং করা হয়। বেশিরভাগ এই র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শুধু বিশ্বর‌্যাঙ্কিং নয়, এশিয়ার মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোর র‌্যাঙ্কিংয়েও আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায় না।

অনেকে বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব র‌্যাঙ্কিং-ফ্যাঙ্কিং ভুয়া। কিন্তু বাস্তবে সত্য। আমরা ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারছি না। কিংবা আদৌও কখনও সেই চেষ্টা করা হয়েছে কিনা, তা ভাবনার বিষয় বটে।

উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্য র‌্যাঙ্কিং করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রকাশনা 'টাইমস হায়ার এডুকেশন'। তারা প্রতি বছর বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশ করে থাকে।

র‌্যাঙ্কিং মানদণ্ডে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যাটাগরিজ্‌ড করা হয়, তার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গবেষণা। কতটি গবেষণাপত্র বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে প্রকাশ পেল, কতটি সাইটেশন হলো তার ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর পর আসে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, এদের মধ্যে বিদেশি কতজন আছে, সেটাও গুরুত্ব পায়।

মোট পাঁচটি বিভাগে ১৩টি আলাদা সূচকে আরও রয়েছে আবিস্কার কিংবা গবেষণা থেকে আয়, আন্তর্জাতিক বৈচিত্র্য, শিক্ষা ব্যবস্থা। আর এসব বিষয় মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামগ্রিক তালিকা প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞান সাময়িকী 'নেচার'-এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা নিবন্ধে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৪১০ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে ৮০৫টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে শীর্ষে 

রয়েছে চীন। এর পর ৩১৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট নিয়ে ৫৫৬টি আর্টিকেল লিখে দ্বিতীয়; ১৩৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট আর ৩৯১টি প্রবন্ধ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর দশমিক ৭ পয়েন্ট নিয়ে ক্রয়োদশতম তালিকায় স্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। যাদের নিবন্ধ সংখ্যা ৪। যেগুলোর মূল গবেষকরা বিদেশি।

এখন প্রশ্ন- আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এসব র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকার যোগ্য?

যে শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করল, তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়কে চেনাতে হলে তার যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। ঠিক তাই, দেশের বাইরে আমাদের দেশের যেসব ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে, মূলত তাদের ভালো কাজের বিনিময়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচয় মিলছে বিশ্বদরবারে। অথচ বিষয়টা হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দেখে একটি শিক্ষার্থী কেমন হবে, তা আঁচ করতে পারেন বাইরের দেশের অধ্যাপকরা। 

কিন্তু কেন আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না? পিছিয়ে কেন আমরা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের অবস্থানটা কেমন, তা জানা প্রয়োজন। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তরতর করে এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে তাদের দেশগুলো লাউয়ের ডগার মতো বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

মাঝেমধ্যে আমাদের অনেক শিক্ষিতজন জিজ্ঞাসা করেন, আমরা কেন গবেষণা করি? এসব গবেষণার তাৎক্ষণিক ফল তো নেই। তো সরকার কেন কোটি কোটি টাকা ঢালবে? মৌলিক গবেষণা বাংলাদেশের জন্য কেন প্রয়োজন? কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারের কিংবা দেশের লাভ কী? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য গবেষণারই-বা কী প্রয়োজন?

প্রশ্নগুলো সাধারণ মানুষের হলেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গবেষণা খাতে উদাসীনতা আমাদের বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এবার আসা যাক গবেষণা কেন প্রয়োজন? এসব প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। ধরুন, আপনি ভাত খেয়েছেন; কিন্তু পানি খেলেন না। তাহলে কি সেই ভাত আপনার দেহে কাজে দেবে? যদি না দেয় তাহলে প্রচলিত শিক্ষার বিষয়টাও এভাবে কল্পনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য তা আবশ্যিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌলিক গবেষণার ফল দীর্ঘমেয়াদি। আজকের কম্পিউটার আবিস্কার হয়েছিল ১৮৩৩ সালে। কিন্তু তার ব্যাপকতা পাচ্ছি কয়েক দশক ধরে। বংশগতির যে খুঁটি ধরা হয় সেই ওয়াটসন ও ক্রিকের ডিএনএ মডেল এসেছিল ১৯৫৩ সালে; কিন্তু তার ব্যাপকতা ছড়িয়েছে দুই যুগ আগে। বিজ্ঞানের এই গবেষণাগুলোর পেছনে যদি আমাদের মূলধন ব্যয় না হয় তবে আমরা আজকের এই আধুনিক প্রজন্ম বলে দাবি করতে পারতাম না। 

আজকে ক্যান্সারকে দুরারোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও আগামী এক দশকের মধ্যে এই চিকিৎসাও নিরাময়যোগ্য বলে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষকরা বেশ শক্ত কণ্ঠে দাবি করছেন। আমাদের কৃষি ব্যবস্থার যে ব্যাপকতা, তা শুধুই গবেষকদের একনিষ্ঠ পরিশ্রম আর সাধনার ফসল।

এশিয়ার সব দেশ যে তরতর করে এগিয়ে চলেছে, তার প্রমাণ তাদের গবেষণা প্রবন্ধ। বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স, নেচার, জ্যাকস, পলস আর পানাসে আজ চীন, জাপানের যে দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে তা থেকে অনায়াসে বলা যেতে পারে, খুব শিগগির তারা বিশ্বে গবেষণা ক্ষেত্রে বড় ধরনের স্থান 

দখল করে নিতে চাচ্ছে। সম্প্রতি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, তাইওয়ানের গবেষকরা যে ভেলকিবাজি দেখাচ্ছেন, তাতে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার মতো।

আমাদের চেয়ে ছোট ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আফ্রিকার দেশ লেসুথো তাদের মূল জিডিপির ১২ দশমিক ৯৮, কিউবা ১২ দশমিক ৮৬, ঘানা ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ বাজেট গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত ৩ দশমিক ১৭, নেপাল ৪ দশমিক ৫২, পাকিস্তান ৩ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় করছে। আর আমরা সেখানে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ পার করতে পারিনি।

তবে মজার বিষয় হলো, হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যে যখন সরকার আমাদের গবেষণাকে ত্বরান্বিত করার জন্য কিছু বরাদ্দ দিয়ে থাকে কিংবা যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দেয়, তা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোটি টাকার কেনা যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে পড়ছে। বরাদ্দ সংকীর্ণতায় গবেষকরা এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছেন না। এগুলো যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র হয়, তাহলে এর দ্বিগুণ সংখ্যায় যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা পরিসংখ্যানে আনা কঠিন।

তাই বলে আমরা আমাদের নিজস্ব অবস্থান তৈরি করব না? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির কারণে আমাদের জীবনধারায় পরিবর্তন আসছে, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড অধিকতর গতিশীল হচ্ছে তা বিশ্ববাসী টের পাচ্ছে; কিন্তু আমরা কেন পিছিয়ে? 

জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক

সূত্র: সমকাল

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006878137588501