আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই হাল কেন? - Dainikshiksha

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই হাল কেন?

এ কিউ এম হাবিবুল্লাহ |

চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশের দুটি অন্যতম সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটির ৯৭তম জন্মদিন, অন্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যেটির উদযাপিত হয়েছে ৬৫তম জন্মদিন। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো মাত্র ছয়টি সেখানে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এমন একটি দেশে দেড়শ’ বিশ্ববিদ্যালয় থাকার সোজা-সাপ্টা মানে হচ্ছে, শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ঠিকই কিন্তু মানের দিক দিয়ে বা বিশ্ব মার্কিংয়ে পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে।

গতবছর স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবম্যাট্রিক্স বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি মার্কিংয়ের সংস্করণ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, আমাদের দেড়শ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থানে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্বের মধ্যে তার অবস্থান ২০৬১ তম। অন্যদিকে এশিয়ার সেরা একশ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি।

কিন্তু কি জন্য বিশ্ব প্রতিযোগিতায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই হাল? এর উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব না। কতগুলো বিষয়ের উপর বিবেচনা করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বা অবস্থা নির্ধারণ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, গবেষণার সংখ্যা, গবেষণার মান, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি, শিল্পের প্রযুক্তি স্থানান্তর, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবও বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান, জ্ঞানচর্চা এবং নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার— এই তিনটা বিষয়কে বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পাঠদান, জ্ঞানচর্চা মোটামুটি হলেও নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার বা মৌলিক গবেষণা কতটা হচ্ছে বা হলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য মৌলিক গবেষণা আবশ্যক, অনেকে এই আবশ্যকতা থেকেই গবেষণা করে থাকেন। যার ফলে এই গবেষণার মান যেমন নড়বড়ে হয় তেমনি এই গবেষণা সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কোনো উপকারে আসে না। এর দ্বারা শুধুমাত্র যিনি গবেষণা করেন তার পদোন্নতিই হয়। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে, যদিও সে সংখ্যাটা কম।

মানসম্মত একটা মৌলিক গবেষণা সম্পন্নের জন্য অর্থের প্রয়োজন, প্রায়ই এই গবেষণার অর্থ গবেষকের নিজের পকেট থেকেই খরচ করতে হয়। কারণ গবেষণা খাতে রাষ্ট্রের বরাদ্দ নিতান্তই কম। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিলো মাত্র ৪ কোটি টাকা। সারা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো শিক্ষাখাতে তাদের জিডিপির ৪%-এর বেশি ব্যয় করে। ভারত করে তাদের জিডিপির ৩.৫% থেকে ৩.৭%-এর মত। পাকিস্তান করে ২.৮%, আমেরিকা করে ৫%, ইংল্যান্ড করে ৫.৬%,  ব্রাজিল করে ৫.৬%, ইরান ৪.৭%, নেপাল ৩.৭% আর চীন করে ৪%-এর উপরে। অথচ আমারা বরাবর ২%-এর আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছি!

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা এমন হওয়া উচিত যেখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ মতামত ও আদর্শের লালন করতে পারবে। এজন্যই তো বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এমন হালের পিছনে এই কারণগুলো অন্যতম। এ ছাড়াও শিক্ষকদের অতিমাত্রায় রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া, পেশাদারিত্বে অবহেলা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি, নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন প্রভৃতি কারণগুলোও কম দায়ী নয়।

 

লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034580230712891