আম্ফানে উপকূল তছনছ, নিহত পাঁচ - দৈনিকশিক্ষা

আম্ফানে উপকূল তছনছ, নিহত পাঁচ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

তীব্র বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও উঁচু জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালী উপকূল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি।  বুধবার রাত নয়টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার গতিবেগে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত করে। এ সময় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল। এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপে প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করার কারণে ঝড়ের তাণ্ডব কিছুটা কম হয়েছে। 

গতকাল রাত ২টা পর্যন্ত দেশের চারটি জেলায় গাছচাপায় ও পানিতে ডুবে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানোর সময় ঝোড়ো বাতাসে নৌকা ডুবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবী ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপির) টিম লিডার শাহ আলম মারা গেছেন। আর বরগুনায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বিকেল চারটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা উপকূলে প্রবেশ করে। দক্ষিণাঞ্চল ঝড়ের কবলে বিদ্যুৎ-টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সবচেয়ে বড় প্রভাব রেখে গেছে জলোচ্ছ্বাস দিয়ে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ আম্পানের প্রভাব শেষ হতে পারে। কমে আসতে পারে বাতাস ও বৃষ্টিপাত। 

রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের অবস্থান বাংলাদেশে ছিল। রাত নয়টায় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার। বৃহত্তর ময়মনসিংহ দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, রাতে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার পর সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, পানির উচ্চতা ৯ থেকে ১০ ফুট।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার পৌঁছাতে গিয়ে সন্ধ্যায় মাধবখালী গ্রামে গাছচাপা পড়ে হাবিবুর রহমান নামের এক গ্রাম পুলিশ আহত হয়েছেন।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, রাত আটটার দিকে কয়রার দক্ষিণ দেবকাশী ইউনিয়নে তিনটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ঘড়িলাল, আংটিহারা, গোলখালিতে জোয়ারের পানি ঢুকছে। আশপাশের মানুষ আতঙ্কে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

বরগুনা সদর ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও ভোলা প্রতিনিধির জানান, ভোলার তজুমদ্দিনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাজুক বাঁধ ভেঙে ও বাঁধের উচ্চতা ভেদ করে উপচে ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধি রাত ১০টায় জানান, বলেশ্বর নদের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হয়েছে ইউনিয়নের ৮ গ্রাম। পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারে। পানগুছি নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা। সন্ধ্যা থেকে শুরু তুমুল ঝড়, এখনো চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় জেলা ও দ্বীপগুলোতে সর্বমোট ৫ হাজার ৭৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে। তবে সেগুলোর বেশির ভাগের উচ্চতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। ষাটের দশকে তৈরি হওয়া এসব বাঁধের দুই-তৃতীয়াংশ মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ৫ বছর ধরে এসব বাঁধের এক-তৃতীয়াংশ মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু তারও অর্ধেক মাত্র শেষ হয়েছে। এ ছাড়া গত এক যুগে সিডর, আইলাসহ কমপক্ষে আটটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সয়েছে এই বাঁধগুলো। ফলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আসা আম্পানের কারণে তা অনেক নাজুক অবস্থায় থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোয়ারের উচ্চতা বেশি থাকায় আজও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে।

অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিকেল থেকেই গ্রামগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করা শুরু করে। আর রাত নয়টা থেকে বেশির ভাগ এলাকায় জোয়ারের পানি বাঁধ টপকে বসতি এলাকাগুলোতে প্রবেশ করে। বিশেষ করে হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি, খুলনার দাকোপ ও কয়রা, বাগেরহাটের শরণখোলা, বরগুনা ও ভোলার বিভিন্ন স্থানে দিনের বেলায়ই বেড়িবাঁধ চুইয়ে ও টপকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।

সিডর-আইলার সঙ্গে মিল

১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূলে ৩৩টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। এর বেশির ভাগই চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট ও বরিশাল এলাকা দিয়ে আঘাত করেছে। ২০০৭ সাল থেকে হিসাব করলে দেশে মোট সাতটি বড় ঝড় আঘাত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরে সিডর ও ২০০৯ সালের মে মাসের আইলা। এই দুটি ঝড়ের মধ্যে সিডর ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার গতি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে বাগেরহাটের কাছে বলেশ্বর নদ দিয়ে শরণখোলায় আঘাত করে। আর আইলার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ পাওয়া গেছে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। আম্পানের মতোই আইলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিল জলোচ্ছ্বাস। সে সময়ও ঘূর্ণিঝড়টি স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আঘাত করে।

ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণে মানুষের মৃত্যু ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার ঘটনা কম ছিল। কিন্তু দেশের উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অর্ধেকের বেশি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক-তৃতীয়াংশ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা ও বরগুনার বহু মানুষের জীবন ও জীবিকার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। এসব জেলার বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় টানা তিন থেকে পাঁচ বছর ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ ব্যাহত হয়।

 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043621063232422