আলোকিত শিক্ষক চাই - দৈনিকশিক্ষা

আলোকিত শিক্ষক চাই

মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা |

প্রতিদিন কোন না কোন দিবসের মধ্যে সূর্য উদয় হয়। মা দিবস, বাবা দিবস, কন্যা দিবস, নদী দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস সহ নানাবিধ। দিবসের কোন শেষ নেই। এই তো সেদিন ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস 

পালিত হলো। গুম দিবসেই খবর পেলাম এক রাজনৈতিক দলের এক বন্ধু গুম হয়ে গেছে। কন্যা দিবসের দিন শিশু কন্যা নির্যাতনের খবর শুনতে হয়, মা দিবসের দিন বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের কান্না দেখতে হয়, বাবা দিবসে বাবাদের হাহাকার ছাড়া আমরা কিছুই উপহার দিতে পারি না। দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনে যে সময়টুকু ব্যয় করে চলেছি তার হিসাব কি কখনো আমরা মিলিয়ে দেখেছি। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে প্রথমেই পৃথিবীর সকল শিক্ষকদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তাদের প্রতি আমাদের অফুরন্ত শ্রদ্ধা আর ভালবাসা রইল।

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও) 

এক সময় মুরুব্বিরা বলতেন বাবা-মা’র পরে যদি কাউকে সম্মান করতে হয় তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক। সেই শিক্ষা নিয়ে আজ অব্দি জীবনের বহুসময় পার হয়ে গিয়েছে। এখনো শিক্ষকদের দেখলে মাথা নিঁচু হয়ে যায়। তাদের আলতো পরশ মাথার উপরে পড়লেই যেন স্বর্গের সুখ পাই। অনেকদিন পর এলাকায় গেলে প্রিয় শিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের কুশলাদি জানতে চাই। শিক্ষকরা আমাদের আইডল। অথচ বর্তমানে শিক্ষকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, আস্থা ও ভালবাসা কেন জানি দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই দেখা যায় ছাত্ররা ভিসিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে যেই আন্দোলনের মূল উৎস কলম, খাতা নয়। ভিসিদের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারী। শিক্ষকরাও আগের মত ছাত্রদেরকে স্বভাবসুলভ জ্ঞান না দিয়ে নিজেরা আলাদা কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট বাণিজ্যসহ নানাভাবে রাজনীতির সংকীর্ণতায় নিজেদেরকে আবদ্ধ করে ফেলছে। এই দু’দিন আগেও কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেকে রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয় দিয়ে বেশ খোশ মেজাজে ছিলেন। প্রতিদিনই স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি বেসরকারি যেখানেই তাকিয়ে দেখি সেখানেই একটি অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা। কে কার আগে নিজেকে রাজনৈতিক মেরুকরণের চাদরে আবৃত্ত করে প্রকাশ করবে। 

শিক্ষকরা ঘুম থেকে উঠেই যেন ছাত্রদের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে কোথাই কোন দিবস চলছে তার দিকেই তাদের এখন বেশী দৃষ্টি রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকরা নানা রকম সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। সরকারি বেতনাদি পাওয়ার পরেও তাদের ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষাসহ নানা পরীক্ষা চলছেই। আর পরীক্ষা এলেই শিক্ষকদের একটি বাড়তি আয়ের উৎস বেড়ে যায়। এসব দোষের নয়। দোষ হচ্ছে ঐ শিক্ষক যখন বাড়তি আয় করতে গিয়ে নিজের স্বকীয়তা থেকে বাড়তি প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ছাত্ররা লাল কার্ড দেখিয়ে মিছিল করছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছে। তারপরেও তিনি নাকি কোন অপরাধ করেননি। তাই পদত্যাগ করার কোন প্রশ্নই আসে না। একসময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও তার জায়গায় অনড় ছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও পদত্যাগ করলেন। অথচ আমরা শিক্ষকদেরকে তাদের ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলন করে বের করে দেব এই চিন্তা মস্তিস্কেই আসেনি। কোন শিক্ষক যদি বয়সের কারণে বিদায় নিয়ে যেতে চান তাকে আমরা সবাই মিলে নানা আয়োজন করে চোখের জল দিয়ে বিদায় করতাম। সেই সোনালী দিনগুলি কিভাবে ফিরে আসবে? 

যথনই যে নির্বাচন আসে সেই নির্বাচনে শিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। ভোটার তালিকা করতেও শিক্ষকদের কাজে লাগানো হয়। এভাবে শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নানা ভাবে রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েন। আর যখন একজন শিক্ষক রাজনৈতিক আবরণে নিজেকে শতভাগ যুক্ত করে ফেলেন তখন শিক্ষকতার যে স্বকীয়তা থাকে সেই স্বকীয়তা তার চিন্তা চেতনা থেকে অনেকাংশে হারিয়ে যায়। আর সেখানেই আমাদের বিপত্তি। সব সমাজের সব সুধীজনরাই এক বাক্যে বলেন একজন ভাল শিক্ষক চাই। কারণ একজন ভাল শিক্ষক একজন ভাল মানুষ তৈরি করতে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু সেই ভাল শিক্ষক আমরা কিভাবে উপহার দিতে পারি এ বিষয়ে রাষ্ট্র এবং সমাজের সুশীল সমাজের যে প্রতিনিধি তারা কি একবারও চিন্তা করেছেন। শিক্ষক দিবসে যদি এবারের অঙ্গীকার হতো প্রতিটি শিক্ষক হবে রাজনীতি মুক্ত। তিনি কোন রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারবেন না। নিজেকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এদেশের নুতন প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একজন শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই মিলে শিক্ষক দিবসে আমাদের সেই সমস্ত শিক্ষকদেরকে খুঁজি যাদেরকে দেখলে মাথা নিচু হয়ে যায়, শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে, ভালবাসায় ভালবাসায় পরিপূর্ণ হয় হৃদয় আমার শিক্ষক আমার জীবনকে আলোকিত করবে আমার যৌবনকে অন্যায় অন্ধকার থেকে সুন্দর পথে পরিচালিত করার জন্য দিকনির্দেশনা দেবে। তিনি হবেন সমাজের আলোকিত দর্পণ। 

লেখক: মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.026104927062988