শহরের রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান গেটসংলগ্ন এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পারে গত ২ জুন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের সময় তিন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার ১৩ দিন পার হলেও কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পারভীন আক্তার গতকাল শনিবার নিজ স্কুল কাটাছড়িতে হাজির হয়েছিলেন। তবে পুুলিশ এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।
এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ভবনটির মালিক সদর উপজেলার কাটাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার, তাঁর ভাই যুবলীগ নেতা আলিমউল্লাহ এবং শ্রমিকদের মাঝি তোফাজ্জল হোসেনের নামে মামলাটি করেছিলেন কোতোয়ালি থানার উপপুলিশ পরিদর্শক জসীমউদ্দীন।
কিন্তু মামলার ১৩ দিন পরও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের চাপে আগেই মামলায় কয়েকজনকে আসামি করা হয়নি। কেউ কেউ বলছে, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ অজ্ঞাত চাপের কারণে তাদের গ্রেফতার করছে না। অভিযোগ উঠেছে, আসামিদের গ্রেফতার না করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই দীর্ঘসূত্রতা করছে পুলিশ।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা লিমন বোস বলেন, ‘আসামিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি, আমাদের অভিযান এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করতে পারব।’ তবে মূল আসামি পারভীন আক্তার শনিবার স্কুলে উপস্থিত ছিলেন—এমন তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে এ ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এ কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম জানান, ‘তদন্ত কার্যক্রম চলছে। আমরা শিগগিরই প্রত্যক্ষদর্শীসহ সবার সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রতিবেদন পেশ করব।’
এদিকে এ দুর্ঘটনায় তিন শ্রমিক নিহত হলেও মামলার প্রধান আসামি ও নির্মিতব্য ভবনের মালিক পারভীন আক্তার সরকারি চাকরিজীবী এবং পলাতক থাকলেও এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এ ব্যাপারে পারভীনের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিতা চাকমা বলেন, ‘আমি ঘটনাটি লোকমুখে ও পত্রিকায় পড়ে জেনেছি। আজ (শনিবার) সে স্কুল এসেছিল এবং শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে একটি ছুটির আবেদন দিয়ে গেছে।’ সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ বিষয়ে রাঙামাটির সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, ‘তার নামে মামলা কিংবা পুলিশ গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে এ রকম বিষয়টি আমার জানা ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মানুসারে এমনটা হলে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা। বিষয়টি খোঁজ নিলে বলতে পারব।’
রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এস এম শফি কামাল বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকৃত দোষীদের আসামি করে মামলা করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। সেই মোতাবেক মামলাও হয়েছে। এখন আসামি গ্রেফতার না হওয়াটা দুঃখজনক।’