সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদরাসা আর সংস্কৃত টোল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসাম সরকার। জনগণের অর্থে কোনও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন আসামের অতি প্রভাবশালী শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
বুধবার এক অনুষ্ঠানের শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, " কেউ যদি ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে চান, তাহলে বলার কিছু নেই। কিন্তু সরকারি অর্থে সেটা চলতে পারে না। যদি আরবি শিক্ষা দিতে হয়, তাহলে গীতা বা বাইবেল শিক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।" বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অমিতাভ ভট্টশালী।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই সব সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদরাসা আর সংস্কৃত টোল বন্ধ করে দিয়ে সেগুলিকে হাইস্কুলে পরিণত করা হবে বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
মাদরাসা বা টোলগুলিতে যারা ধর্মশিক্ষা দেন, তাদের যতদিন চাকরী বাকি আছে, ততদিনই মাসে মাসে বেতন পেয়ে যাবেন, আর যারা অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন, তাদের স্কুলে পড়াতে হবে।
মি. বিশ্বশর্মা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "এই সিদ্ধান্ত কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয় নি। সংস্কৃত টোলও তো বন্ধ করা হচ্ছে!"
তার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আসাম সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন বা আমসুর প্রধান রেজাউল করিম সরকার বলেন, "তিনি মুখে যতই বলুন না কেন যে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি, তবে মি. বিশ্বশর্মার টার্গেট হচ্ছে মুসলমানরা।"
"অসমে কীভাবে মুসলমানদের কোণঠাসা করে দেওয়া যায়, সেই কাজই তিনি করে চলেছেন একের পর এক - তা সে এনআরসি হোক বা মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত," বলেন মি. সরকার।
তিনি আরও বলেন, "টোল বা মাদরাসাগুলি বন্ধ না করে সেগুলিকে উন্নত করার কথা কেন ভাবা হল না? যে ধর্মীয় শিক্ষা তো টোল বা মাদ্রাসাতে দেওয়া হয়, তা তো আসলে সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য, যেখানে কোনও হিংসা বা দ্বেষ থাকবে না।"
"সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে সরকার চাইছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা বিদ্বেষ ছড়াক আর তা থেকে আগামী বছরের নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ হোক।"
আসামে এখন ৬১৪টি স্বীকৃত মাদরাসা রয়েছে, যেগুলি পরিচালনা করে রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
সংস্কৃত টোল বা বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজারেরও বেশি, কিন্তু সরকারি সাহায্য পায় মাত্র ৯৭টি টোল।
সেগুলিতেও ছাত্র সংখ্যা হাতে গোনা, কারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংস্কৃত পড়ার আগ্রহ খুবই কম।
আসামে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ১৭৮০ সালে।
রাজ্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, "আসামের মাদরাসা শিক্ষা আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃতি পেয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতীক হিসাবে। এমনকি পাকিস্তানে মাদ্রাসাগুলিতে যেভাবে কট্টর ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হয়, তাদেরও আসামের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শেখা উচিত।"
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আরও লিখেছে যে "২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শিক্ষার উঁচু মানের কারণে অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা বড় সংখ্যায় মাদরাসা পড়তে আসছে।"