রংপুর অঞ্চলে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম ‘ই-সিগারেটে’ আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনলাইন জগতের বিভিন্ন পণ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইটে তরুণ প্রজন্মের মনকাড়া ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপন কিংবা বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে তারা এ নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইসরাত মাহি নামের এক শিক্ষার্থী জানালেন তার ই-সিগারেটে আসক্ত হওয়ার কথা। মাহি জানান, অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের একটি ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি হরেকরকম দামের ও নানা ফ্লেভারের ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সেখান থেকে একটি পছন্দ করে সেটি ক্রয়ের অর্ডার করেন। তখন থেকেই ই-সিগারেটের প্রতি তার আসক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ই-সিগারেটে আসক্ত বেরোবির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভাগের দুই বন্ধুর ই-সিগারেট সেবন করা দেখে এ নেশায় আসক্ত হই। আমি চেইন স্মোকার ছিলাম। মূলত ধূমপান ছেড়ে দেয়ার বিকল্প হিসেবে এটি ধরি। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় আমার ক্রনিক কাশি হয়। ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা খুলে বলি। ডাক্তার আমাকে ই-সিগারেট ছাড়ার পরামর্শ দেন। তারপর ধূমপান ছেড়ে দিয়ে এখন সুস্থ।’
তারিক নামে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, রংপুর সুপার মার্কেটের একটি দোকান থেকে ই-সিগারেট ক্রয় করে তিনি এই নেশার যাত্রা শুরু করেন। তারিকের ই-সিগারেট সেবন দেখে অনেক বন্ধুই এই নেশায় আসক্ত বলে তিনি জানান।
শুধু বেরোবি কিংবা কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাই নয়, রংপুরের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড়ো অংশ ধীরে ধীরে এ নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
রংপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, ই-সিগারেটের প্রধান উপকরণ নিকোটিন থেকে দ্রুত আসক্তি তৈরি হয়। সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ। সাধারণ সিগারেটের চেয়ে এটি ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি ক্ষতিকর।’
‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন ই-সিগারেটের নিজস্ব পেইজে এই ক্ষতিকর পণ্যটির বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। ফলে বিশেষ ধরনের নেশায় আকৃষ্ট হয়ে রংপুরসহ দেশের তরুণ প্রজন্মের বড়ো একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সরকারকে এই মরণনেশার ভয়ংকর থাবা থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের রংপুর অঞ্চলের অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. তুহিন ইসলাম বলেন, ‘ই-সিগারেট সেবনে সারাবিশ্বে প্রায় শতাধিক মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এটি সেবনের ভয়াবহতা বিবেচনায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৩টি দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে ই-সিগারেট। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ‘ই-সিগারেট’ বিষয়ে কিছু বলার নেই। তাই আইনে ‘ই-সিগারেট’ সম্পর্কিত ধারা সংযুক্ত করে বাংলাদেশে দ্রুত এটি নিষিদ্ধ করতে সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’