ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব - দৈনিকশিক্ষা

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব

মাছুম বিল্লাহ |

  
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যদি বলা হয় যে,  ইংরেজি ভাষা শিখলে তোমাদের ভালো চাকরি হবে। তোমরা বিদেশে যেতে পারবে। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে। এ যুক্তিগুলো কি তাদের  টাচ করবে? করবে না। কারণ এ বিষয়গুলো তাদের জীবন থেকে এখনও অনেক দূরে। তাহলে তাদের আমরা কীভাবে মোটিভেট করব ইংরেজি শিখতে? 

শিক্ষার্থীদের আমরা বলতে পারি, মনে কর,  ‘তুমি যদি ইংরেজি ক্লাসে শিক্ষকদের দেয়া পড়া ঠিকমতো পার তাহলে ক্লাসে কেমন লাগবে? শিক্ষক, তোমাকে আলাদাভাবে আদর করবে, তোমার সাহস বেড়ে যাবে, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীরাও তোমাকে সমীহ করে চলবে।

ইংরেজি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে শুধু নিজ ক্লাসে নয়; পুরো স্কুলে তোমাকে সবাই চিনবে, সকল শিক্ষক তোমাকে চিনবেন। প্রধান শিক্ষক তোমাকে চিনবেন। স্কুলের উঁচু শ্রেণির বড় ভাইয়েরা ও বোনেরা  তোমাকে চিনবে। এর ফলে তোমার আশেপাশের বিদ্যালয়ের সবাই তোমাকে চিনবে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এগুলো কি তুমি চাও না? তাহলে ইংরেজিতে সব স্কিলেই ভালো করার চেষ্টা তুমি করছ না কেন? 

আরো পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। প্রথম পর্ব

একইভাবে কেউ যদি কোনো অফিসে/প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং তার ইংরেজির দক্ষতা অনেকের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে দেখা যাবে সবাই তাকে সমীহ করে চলে, অফিসের সবাই তাকে চেনে। আমরা বাস্তব জীবনে এইটুকু কি চাব না? তাহলে ইংরেজি ভালোভাবে শিখছি না কেন? বিদেশে কোনো প্রশিক্ষণ, সেমিনার কিংবা কোনো কোর্স করার সুযোগ এলে, অফিস কাকে পছন্দ করবে সেখানে পাঠানোর জন্য? প্রথমেই চিন্তা করবে যে বা যারা ইংরেজি ভালো পারেন তাদের পাঠাতে হবে যাতে নিজের উপকার হয়, প্রতিষ্ঠানের উপকার হয় এবং সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষা করতে পারে।

আমরা যা কিছুই প্রকাশ করতে চাই সে জন্য আশ্রয় নিতে হয় ভাষার। সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত সব কিছুই আমরা প্রকাশ করি ভাষার মাধ্যমে। আমরা বাংলার মাধ্যমে এগুলো প্রকাশ করি, নিত্যদিনের চাহিদা মেটাই। কিন্তু উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও বেশি জানতে হলে, বুঝতে হলে আমাদের আশ্রয় নিতে হয় অন্য আর একটি ভাষার; যেটি পৃথিবীব্যাপী  বিস্তৃত, সেই ভাষাটি অবশ্যই ইংরেজি।

পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষার যত সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন রয়েছে সেগুলোর অনেকটাই অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে। কাজেই ইংরেজিটা জানলে আমাদের জানার জগৎ যে কত বিস্তৃত হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর কোনো সম্মানজনক ও অধিক উপার্জন করা যায় এমন কোনো কাজ পেতে হলে ইংরেজি তো জানতেই হবে। ইংরেজি জানা লোকদের ভাইভা বোর্ডের সদস্যগণ অবশ্যই বেশি পছন্দ করেন। একই যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের মধ্যে ইংরেজি জানা প্রার্থীদের তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। এ বিষয়টি আমরা চাকরি জীবনে দেখছি। তাই নয় কি?

যেসব দেশের বা জাতির মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তারা প্রায় সবাই দ্বিতীয় ভাষা কিংবা বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা বেশ আগেও জোরদার ছিল। বিশেষত উচ্চ শ্রেণির মধ্যে।
 
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর চলটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও বেশ প্রচলিত হয়েছে। চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির মাধ্যমও অনেকদিন ধরে কার্যত ইংরেজি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্র প্রচার করেছে। অভিভাবকদের দিক থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর কারণটা খুব সরল আর জোরালো এবং যুক্তিযুক্তও বটে।

বাংলা ও ইংরেজিকে খুব সহজে এবং যুক্তিগ্রাহ্যভাবে পাশাপাশি রেখে বিবেচনা করা যায় এবং শেখানো যায়। এ দুটো প্রতিযোগী নয়, সহযোগী। হতেও হবে তাই। ভারতে কোটি কোটি মানুষের মাতৃভাষা ইংরেজি। বহুভাষিক বাস্তবতার কারণে ইংরেজি রপ্ত করার ব্যবহারিক চাপ সেখানে প্রবল। সব মিলিয়ে সেখানে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার একটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। আমাদের অবস্থা যদিও এটি  থেকে আলাদা, ইংরেজির গুরুত্ব কিন্তু তাতে কমে যায়নি বরং বাড়ছে।  

শিক্ষা পণ্য বটে; তবে একটু ভিন্ন ধরনের পণ্য। আর ভাষা শিক্ষা কোনো একজনকে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে উপনীত করে এবং করতে পারে। তাই  ইংরেজি শিক্ষাকে অধিকাংশ মানুষ অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অতএব, তাকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারছি না। বাংলদেশের মূলধারার শিক্ষার্থীরা অন্তত ১২ বছর ইংরেজি পড়ে। তথ্য-উপাত্ত, অভিজ্ঞতা  ও বাস্তবতা বলছে যে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ১২ বছর পড়ার পরও ভাষাটা কাজ চালানোর উপযোগী পরিমাণে রপ্ত করতে পারছে না। পদ্ধতিগত ঘাটতি ছাড়া এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা হয় না। তাহলে প্রথম করণীয় হলো বিদ্যমান ইংরেজি শিক্ষার পদ্ধতিগত সংস্কার ।

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039000511169434