ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ভ্যাট আদায়ে জটিলতা - দৈনিকশিক্ষা

ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ভ্যাট আদায়ে জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইংলিশ মিডিয়াম বা ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের এক শর্তকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষায় ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই ভ্যাট আদায় করা যাবে না। সংশ্নিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারকে ভ্যাট দেবে। জানা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় কার্যকর করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে এ খাত থেকে ভ্যাট আহরণ বন্ধ রয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও অভিভাবকরা বলেছেন, শিক্ষায় ভ্যাট হয় না। এটা বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী। জোর করে ভ্যাট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। 

অপরদিকে এনবিআর ও ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান, 'সার্বজনীন শিক্ষায় কোনো ভ্যাট নেই। কিন্তু এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা হয়।' তাদের মতে, ইংলিশ মিডিয়াম সার্বজনীন শিক্ষার বাইরে। ব্যয়বহুল বিশেষায়িত এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভিন্ন কারিকুলামের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তা ছাড়া সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের রায়ে ভ্যাট আদায়ের কথা বলেছেন। ফলে নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ভ্যাট দিতে হবে। 

বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায় ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে যে টিউশন ফি নেওয়া হয়, তার বিপরীতে উল্লিখিত হারে এই ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এ খাতে ভ্যাট আহরণ হয় বছরে ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে ১৬০টি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। 

প্রেক্ষাপট :ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ও টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের ওপর চাপ বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করে, ভ্যাট আরোপের ফলে বাড়তি ফি নিতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট আদায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজধানী ধানমণ্ডির জাভেদ ফারুক নামে একজন অভিভাবক ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। তার দুই সন্তান ধানমণ্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। 

ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো থেকে ভ্যাট আদায়ে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বেতন-ফি নির্ধারণের নির্দেশও দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শুনানি শেষে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৭ সালের মে মাসে চূড়ান্ত রায় দেন। আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি বাতিল করে দেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় না করে, তার পরিবর্তে স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই ভ্যাট পরিশোধের নির্দেশ দেন। ফলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে ইংরেজি শিক্ষায় ভ্যাট আদায় নিয়ে যে বিতর্ক ছিল তার অবসান হয়। 

আপিল বিভাগের রায়ের পর এনবিআরের অধীনে বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেট অফিস সম্প্রতি সরকারের পাওনা ভ্যাট নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধের জন্য ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৃথক চিঠি দেয়। পাশাপাশি কয়েক দফা বৈঠকও করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিছুতেই ভ্যাট দিতে রাজি নয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে- ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ বা ভোক্তা কর। আইন অনুযায়ী ভোক্তা তথা শিক্ষার্থীরাই এ ভ্যাট দেবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা মানতে নারাজ তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে বলা হয়েছে সংশ্নিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু তারা মানছে না। তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই ভ্যাট দিতে হবে। 

বিদ্যমান আইনে ইংরেজি মাধ্যম ছাড়া অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ভ্যাট নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একবার ভ্যাট বসিয়েছিল সরকার। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজধানী ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ২০১৫ সালে আন্দোলন করে। শিক্ষার্থীদের প্রবল আপত্তির মুখে এক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষায় ভ্যাট তুলে নিতে বাধ্য হয় সরকার। যোগাযোগ করা হলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না বলেন, শিক্ষায় ভ্যাট হয় না। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সংবিধানের পরিপন্থী ও বৈষম্যমূলক। তিনি বলেন, ভ্যাট যদি দিতেই হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ওই ভ্যাটের অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। এতে অভিভাবকদের ওপর চাপ বাড়বে বলে জানান তিনি। ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বনানী শাখার সাউথ পয়েন্টের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। এ রায়ের পর ভ্যাট আদায়ে এনবিআর থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে বিষয়টি পরিস্কার করা হয়নি বলে জানান তিনি। 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074200630187988