দেয়ালে ঝুলছে রংবেরঙের ছবি। কোনোটায় দেখা যাচ্ছে একুশের প্রভাতফেরি। আবার কোনো ছবিতে মেটে রঙের কুঁড়েঘরের পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছে সবুজ কলাগাছ। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই ছবিগুলো এঁকেছে। গতকাল ছবিগুলো নিয়ে তাদের ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে প্রদর্শনীর আয়োজন ছিল।
ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো নিজেদের মতো করে পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি। স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজ দেশের ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাসের চর্চাকে উৎসাহিত করতে এবং দায়িত্ববোধ থেকে এই দিবসগুলো উদ্যাপন ও পালন করছে তারা।
গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা যায়, অক্সফোর্ড স্কুলের ধানমন্ডি প্রধান ক্যাম্পাসের মিলনায়তনে জড়ো হয়েছে নানা শ্রেণির শিক্ষার্থী। এক কোণে ফুলে ছাওয়া একটা ছোট শহীদ মিনার। শিক্ষার্থীরাই এটা বানিয়েছে। সকালে সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতার শুরু। তারপর উদ্বোধন হয় ‘একুশ স্মরণে চিত্রাঙ্কন ও প্রদর্শনী’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি নিয়ে দিনব্যাপী প্রদর্শনী। সঙ্গে ছিল ভাষা আন্দোলনের ওপর শিক্ষার্থীদের নৃত্যনাট্য এবং বাংলা-ইংরেজি হাতের লেখার প্রতিযোগিতা।
স্কুলটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আহনাফ জান্নাত বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি স্কুল বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা যাতে পরিবারের সঙ্গে দিনটি পালন করতে পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা। প্রধান ক্যাম্পাসে ২০ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। গুলশান, উত্তরা ও বনশ্রী ক্যাম্পাসে ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণ করা হবে।
শিক্ষার্থী ছোঁয়া আহমেদ বলল, প্রতি শ্রেণিতেই বাংলা ভাষা আর ইতিহাসের ওপর একটি কোর্স থাকে তাদের। ওর কথায়, ‘বাংলা একটু কঠিন। তবে কিন্তু নিজের ভাষা-ইতিহাস তো জানতেই হবে।’
স্কলাসটিকা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নামিরাহ ইমরানের জন্যও গতকাল ছিল বিশেষ দিন। নিয়মিত ইউনিফর্মের বদলে সাদা-কালো জামা পরে স্কুলে গিয়েছিল সে। স্কুলের শহীদ মিনারে দেবে বলে সঙ্গে নিয়েছিল একটা ডালিয়া ফুল। একুশে ফেব্রুয়ারি কী হয়েছিল জানে কি না, জানতে চাইতেই আট বছরের নামিরাহ গড়গড় করে বলল, ‘এদিন ভাষার জন্য আন্দোলন হয়। পুলিশের গুলিতে মারা যান সালাম, বরকত, জব্বার। তাই আমরা বাংলা বলতে পারছি।’
অল্প পরিচিত স্কুলগুলোতেও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে বিশেষ আয়োজন ছিল। পুরান ঢাকার ওয়ারীর ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ম্যানচেস্টার স্কুল অব ইংলিশের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য গতকাল ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী করেছেন তাঁরা।