ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলশিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ভ্যাট আরোপ করা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা যাবে না বলে আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছেন। আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, কর্তৃপক্ষ (এনবিআর) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নয়, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করবে বলে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে সেবাদান প্রদানকারী হিসেবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্বাভাবিকভাবে ভ্যাট আদায় অব্যাহত থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এনবিআরের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত ১৪ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগ আবেদনকারী পক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।এরপর গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য আসে।
দেশের ইংরেজি মাধ্যমের ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর ২০১২ সালে সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। এরপর বাজেটে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়, এর আওতায় আনা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। ভ্যাট বাতিলের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। এ অবস্থায় গত বছর সেপ্টেম্বরে সানিডেইল ও সান বিম স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেওয়ার পাশাপাশি ভ্যাট আরোপে স্থগিতাদেশ দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।