ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে তোঘলকি! - দৈনিকশিক্ষা

ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে তোঘলকি!

শিব প্রসাদ দাস |

মাত্র পঁচিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনের তারই দু'একটা অধ্যায় লিখতে বসে আজ কত কথাই না মনে পড়ে যাচ্ছে। ১৯৯০ খিস্টাব্দে চৌধুরী আব্দুল হামিদ একাডেমী , বরাট, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ীতে সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) হিসেবে যোগদান করি। যোগদান  করার পর ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি পড়াতে গিয়ে দেখলাম 'হুক্কা'   আমার ঠিকই আছে , শুধু তার 'খোল' আর 'নলচে'টাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষতঃ ইংরেজির ক্ষেত্রে।

প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো গ্রামার-ট্রান্সলেশন, লিটারেচার পদ্ধতি যেহেতু ভালো না; সুতরাং সেটার পরিবর্তন করে আমাদের দেশের মহামান্য, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সর্বগুণে গুণান্বিত,    সর্ববিষয়ে পারদর্শী বুদ্ধিজীবীদের একাংশ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমাদের ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে Structure ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা নামে এক  অদ্ভুত ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন । সেখানে   ২৮২ টি বিভিন্ন ধরনের Structure -এর উদাহরণ ছিল। তাঁরা  ভাবলেন না; এত উদাহরণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনুশীলন করা এবং মনে রাখা সম্ভব কিনা !!! যেহেতু বিষয়টা আমার কাছে  নতুন, সঙ্গত কারণেই আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল। ফলে  সিনিয়র -জুনিয়র সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখীদের কাছে ছুটে  যেতাম বিষয়টা বোঝার জন্য। এছাড়া বাজার থেকে বিভিন্ন  ধরনের নোট,গাইড বই সংগ্রহ করেছিলাম। সর্বোপরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারলাম বা বুঝতে পারলাম হ্যাঁ Structure - পদ্ধতিই হচ্ছে আমাদের মতো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়  ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। কেননা এটা হচ্ছে বিশ্ব মানের এমন একটা পদ্ধতি যা প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশেই  ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সফলতা লাভ করেছে??? অতএব আমরা কেন ...!!!

পরীক্ষায় খাতায় লিখিত ও নৈর্ব্যক্তিক দু'টো মিলে ৩৩ পেলেই পাস হতো। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ৫০০ প্রশ্ন ব্যাংক নামক এক উদ্ভট ব্যাংক (গাইড বই) হতে করা হতো। যেহেতু নিজে বুঝলাম ,এবার শিক্ষার্থীদের গিয়ে বুঝালাম। তারা বলল জ্বী স্যার ,জ্বী স্যার ভালো পদ্ধতি ! ফলাফল অবশ্য আমাদের সবারই জানা। কেননা, লিখিত পরীক্ষায় শূণ্য বা ১/২/৩ পেয়ে শুধু নৈর্ব্যক্তিকে ৩৩ পেয়েও পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহায়ইত কম না। যেহেতু পাস করাটা অনেক সহজ ছিল ; সেহেতু ৮ম/৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থী সরাসরি ১০ম শ্রেণিতে একবারে রেজিঃ, ফরম ফিলআপ করে রীতিমত পাস করে যেত। কিন্তু জা্তির দুর্ভাগ্য ওই সময়ের (১৯৯২-১৯৯৫) পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দবোধ করে না। কিন্তু এ দায় কার?  

এলো ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন মারফত  জানালো ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরীক্ষায় লিখিত ও নৈর্ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদাভাবে পাস  করতে হবে। অর্থাৎ পাস মার্ক হবে ১৭+১৬ =৩৩। আদিষ্ট হয়ে আমরা গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বললাম। ওরা বলল, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার।

১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ। নতুন বছর । নতুন বই। নতুন সিলেবাস। শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য যেহেতু Structural System -এ শিক্ষার্থীরা বোর্ডের বই পড়ে না, তাই এবার সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি। Communicative -পদ্ধতি, ১ম, ২য় দুই পত্রের জন্যই চালু করা হলো। শতকরা একশত ভাগ নতুন একটা পদ্ধতি। শিক্ষকদের কোন ধারণা  নেই, ট্রেনিংও নেই। তাতে কী! তারপরও যেহেতু শিক্ষক মানেই জ্ঞানী, গুণী, পণ্ডিত মানুষ। অতএব আমরা  আমাদের মতো করে বুঝে গেলাম! ক্লাসে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের  বললাম, 'দেখি সোনারা এবার তোমরা বোর্ডের বই না পড়ে কোথায় যাও।' ওরা বলল, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার। অব্শ্য ওই বছরই ৭/৮ মাসের দিকে সরাসরি ঢাকা থেকে নতুন বইয়ের লেখকদের  দু' এক জন এসে শিক্ষকদের  স্বল্প মেয়াদি (২/৩ দিন) প্রশিক্ষণ  দিয়ে আমাদের মগজ ধোলাই দিয়ে গেলেন। আমরা বললাম, জ্বী হুজুর, আপনারা জ্ঞানী লোক আপনাদের পদ্ধতিই কি সর্বোত্তম পদ্ধতি না হয়ে পারে!! সেখানে দুই পত্রেই Cloze Test with clues এবং Cloze Test without clues এবং দুই পত্রেই unseen comprehension দেওয়া হলো। সনাতন Essay শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে Composition. Paragraph -এর ক্ষেত্রে বলা হলো Firstly, Secondly ইত্যাদি লিখতে হবে। এবার গ্রামার, ট্রান্সলেশনকে সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ  ঘোষণা করা হলো। কেননা, বোকা   লোকেরাই গ্রামার-ট্রান্সলেশন পদ্ধতিতে অন্য ভাষা শিখে থাকে। Rearrange -এর ১ম বাক্য ভুল হলেই জিরো।

২০০২ খ্রিস্টাব্দ। এল নতুন বছর সাথে নতুন বই। বলা হলো ইংরেজি ১ম পত্রে এবার থেকে Unseen Comprehension আর  থাকবে না । Seen Comprehension থাকবে। কেননা ১ম পত্রে Unseen Comprehension থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা মূল বই পড়ছে  না। তবে ২য় পত্রে Unseen Comprehension -ই থাকবে । কারণ  এতে শিক্ষার্থীদের চিন্তা শক্তির বিকাশ বেশি হবে। Paragraph -এর  ক্ষেত্রে firstly, secondly বাদ। আমরা বললাম ঠিক আছে। শ্রেণি কক্ষে গিয়ে বললাম, ''সোনা- মানিকরা বোর্ডের বই পড় না, খেলা  পেয়েছ। দাঁড়াও তোমাদের দেখাচ্ছি মজা। বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। খাওয়াচ্ছি ধান।'' ওরা বলল, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার। এবার Close বাবাজিও তার পাততারি গোটানো শুরু করেছেন।

সময় ২০০৫। এল নতুন বছর সাথে পুরাতন বই। তবে নতুন সিলেবাস।  ইংরেজি শিখব গ্রামার ছাড়া ; তাই কি হয়। অতএব এবার ২য় পত্রে গ্রামার মহোদয় এলেন । তবে ঘাড়ে করে নিয়ে  এলেন সেই পুরনো বস্তাপচা Close বাবাজিকে। মন্দের ভালো  মাত্র সাত বছরের মাথায়ই আমাদের মহামান্য বুদ্ধিজীবীগণ   বুঝতে পারলেন গ্রামার ছাড়া আমাদের ইংরেজি শিক্ষাটা   সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ট্রান্সলেশন? ওহ্, না,না ওটা ব্যাক ডেটেড! এখানে বলে  রাখা ভালো , আমাদের এই ট্রান্সলেশন শেখা বিহীন শিক্ষার্থীরাই যখন কোন ভর্তি পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষা বা এ জাতীয় পরীক্ষার মুখোমুখি হয় তখন কিন্তু বেরসিক পরীক্ষকদের কারণে  তাদের ট্রান্সলেশন করতে হয়। না পারলে স্কুল, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের গুষ্ঠি উদ্ধারের পালা।

বলা বাহুল্য ২০০৬/২০০৭ খ্রিস্টাব্দে  দেশের বিভিন্ন সরকারি  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুলোতে কিছু বিদেশী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য; ওরা বাঙালিকে ইংরেজি বিষয়ে   বিশেষজ্ঞ করে গড়ে দিয়ে যাবে। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ওরা নিজেরাই বরঞ্চ বাঙালির কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ হবার সবক নিয়ে , 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি '  বলে নিজ নিজ দেশে ফিরে  গিয়েছেন।

সময় ২০১৪। নতুন বছর, নতুন বই, নতুন সিলেবাস। ইংরেজি ১ম  পত্র থেকে Seen Comprehension আবার নির্বাসনে। ২য় পত্রে তথৈবচ। ভয়ংকর সিদ্ধান্ত আসল অষ্টম শ্রেণিতে। মাত্র আটমাসে আটবার ইংরেজি ১ম পত্রের সিলেবাস, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন আমাদের মহামান্য বুদ্ধিজীবীগণ। অথচ দশ  মাস শেষে এগারো মাসের মাথায় ওদের পরীক্ষা। ৯ম/১০ম শ্রেণির Rearrange দশ বাক্যের পরিবর্তে আট বাক্যে, Story হবে দশ বাক্য, Paragraph ১৫০ শব্দ , Summary ৬৫ শব্দে লিখতে বলা হলো। যা ছিল পূর্বের সিলেবাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

সময় ২০১৬। সব ঠিক আছে। Summary ৬৫ শব্দের পরিবর্তে ৯০ থেকে ১০০ শব্দ। সময় ২০১৭। Rearrange -এ শুধু ছক দিতে হবে। অর্থাৎ Rearrange -এ কোন Paragraph লিখতে হবে না। ২০০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত Rearrange -এ Paragraph না লিখলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো। অর্থাৎ নম্বর কাটা যেত। ৬নং  প্রশ্ন টেবিল ২ কলাম এর পরিবর্তে ৩ কলাম লিখতে হবে। অনেক আগে অবশ্য ৩ কলাম ছিল। ১ম পত্রে এবার আবার Seen Passage আসল। তাও একটি নয় দু'টি Seen Passage থাকবে। সময় ২০১৮। Summary -তে শব্দ নির্ধারিত নেই। Story at least ten sentences হতে হবে।

আমাদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের জ্ঞানের গভীরতা দেখলে সত্যি না হেসে পারা যায় না। তারা এই মহাজ্ঞানী, মহাজনেরা  ধরেই নিয়েছেন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ের তুলনায়ও ইংরেজিতে ভালো। সেই জন্যই বাংলা ২য় পত্রের ক্ষেত্রে আমরা দেখি (২০০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে) ১) সারাংশ বা সারমর্ম , ২) বাংলা রচনা , গ) চিঠি অথবা দরখাস্ত দু'টো বা তারও বেশি  করে থাকে একটা করে লিখতে হয়।

পক্ষান্তরে ইংরেজি ১ম পত্রে Summary, Story, Paragraph, Letter; ২য় পত্রে Paragraph, Application, Dialogue, CV, Composition - একটা করে থাকে একটা করেই উত্তর লিখতে হয়। কারণ, সম্ভবতঃ আমাদের দেশের এই জাতীয় শিক্ষাবিদরা ধরেই নিয়েছেন, যেহেতু আমাদের দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা তাঁদের মতই (শিক্ষাবিদদের) মেধাবী, সেইহেতু তাদের ইংরেজি প্রশ্নে যা  দেওয়া যাবে তারা তাই লিখতে পারবে। সত্যিই  সেলুকাস!!

"হায়রে বাংলা মায়,

তোমার মস্তকে বসিয়া নির্বোধেরা

বুদ্ধিমত্তার গান গায়!1"

সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে একটা Application লিখলে তার নম্বর ১০। অথচ একটা CV -এর নম্বর হচ্ছে ০৮। যদিও CV -তে  Application এবং সেই সাথে Bio-data লিখতে হয়। CV- পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের কারণে নিজেক বড্ড অসহায় মনে হয়। তাইতো মাঝে মাঝে মনের দুঃখে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ''আর কত দেহাবি বাহে !!!''

মহামান্য সরকার বাহাদুর সাধারণ  জনগণকে বা বাঙালিদের বই কেনার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়া এবং তাদের আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য প্রতি বছর শিক্ষার্থীদেরকে বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। কিন্তু এই মহাজ্ঞানী কর্মকর্তাদের ঘনঘন বই সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর অভিভাবকদের নতুন নতুন গ্রামার, গাইড বই কিনতে হচ্ছে। এমনকি একই বছরে একই বই (গাইড) দুই বারও কিনতে হয়।

২০০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে এনসিটিবি মাধ্যমিক লেভেলের সব  শ্রেণিতে একটা করে বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার বই দিয়েছেন।  পরবর্তীতে এর সংশোধনও করেছেন কয়েক বার। কিন্তু কোন বছরই বোর্ডের সিলেবাসের সাথে  ইংরেজী গ্রামার বই এর চ্যাপ্টারের মিল ছিল না, আজও  নেই। মানের বিচারে বলা যায় বইটি .... .... মানের একটা বই।

২০১৭ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে যখন শুনলাম সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের নেতৃত্বে নতুন বই, নতুন কারিকুলাম  তৈরি হবে।  সংগত কারণেই আশাবাদী হয়েছিলাম, যাক এতদিনে হয়ত  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো জাতীয়তাবাদী মানুষ পাওয়া গেল। কথাটা এই জন্যই বলছি, বঙ্গবন্ধু বিশ্বের বড় কোন স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করেন নেই । বিদেশের মাটিতে, পরিবেশে জীবন পাড় করেন নেই। তিনি নিজ দেশের মাটি, মানুষের সাথে মিশে বড় হয়েছেন। ফলে তাদের চাহিদা,আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর জীবনে । সেই মোতাবেক তিনি কাজ করেছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের কাছেও সেটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু বিধি বাম। ''গেলাম বুক ভরা আশা নিয়ে, ফিরে এলাম কূলা ভরা ছাই নিয়ে ?''

যখন,যতবারই কোন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়, নিয়েছি শ্রদ্ধেয় প্রশিক্ষকদের মুখে বার বার শুধু শুনেছি এ পদ্ধতি কানাডাতে আছে, এটা জাপানে আছে, ওটা আমেরিকাতে আছে, ওটা ভারতে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, কোন প্রশিক্ষক বা কর্তৃপক্ষ বা এ জাতীয় কেউ কোনদিন বলেন নেই এ পদ্ধতি শতকরা একশত ভাগ আমার দেশ, বাংলাদেশের মাটি, মানুষের চাহিদা মোতোবেক তাদেরই স্পর্শে আমরা সৃজন করেছি।  

যে দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন বিশ্বনেতা, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো একজন বিজ্ঞানী, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের মতো একজন সাহিত্যিক (বিশ্বকবি),  এফ.আর খানের মতো একজন স্থপতি, শেখ হাসিনার মতো একজন মাদার অফ হিউম্যানিটি, এডুকেশনের জন্ম। সে দেশের মাটিতে, মাটি-মানুষের উপযোগী সিলেবাস/

কারিকুলাম/ পাঠ্যক্রম  ইওরিক করার মতো একজন শিক্ষাবিদের জন্ম হয় নেই ! টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, চাঁদবাড়িয়া থেকে জাফলং প্রায় তেত্রিশ হাজার মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার মধ্যে একটাও বা একজন শিক্ষকও কি নেই ? যাকে বা  যার সিলেবাস অনুসরণ  করে আমরা মানসন্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারি? এটাও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, মানতে হবে? আমরা আমজনতারা কি তাহলে এতটাই বোকা!!! নাকি আমরা তা হলে বোকার স্বর্গে বাস করছি???

আমার দেশের মাটি-মানুষের উপযোগী সিলেবাস/ কারিকুলাম/ পাঠ্যক্রম তৈরি করার জন্য জনগনের ট্যাক্সের টাকায় জাপান, কানাডা, আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন সফর করতে হয়! সত্যিই বড় সেলুকাস এ দেশ এবং এর কিছু মানুষ!

প্রতীক্ষার অবসান শেষে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে যখন বই হাতে পেলাম, তখন দেখলাম, বমি উগড়ে মতো অখাদ্য, কুখাদ্যে ভরা সেই পুরোনো বই, সিলেবাস বিশেষতঃ ইংরেজি বই, সিলেবাস আবার আমাদের, জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। সঙ্গত  কারণেই আপনার ওপর আমার শ্রদ্ধাবোধে আঘাত লাগল। 

এ দেশে পরিশ্রমী, মেধাবী শিক্ষকের অভাব নেই। স্যার, আপনার মতো এটা আমিও সর্বান্তঃকরণে  বিশ্বাস করি। শুধর যোগ্য,  উপযুক্ত নির্দেশকের অভাবে তাঁরা জাতিকে কিছু দিতে পারছে  না। আপনার নেতৃত্বের কথা শুনে আমার মতো তাদের মনেও হয়ত সেই ক্ষীণ আশার আলো জ্বলেছিল। কিন্তু ২০১৮  খ্রিস্টাব্দের শুরুতে বই, সিলেবাস হাতে পাবার পর কর্পূরের মতো সেটাও উবে গেল। তাইতো আপনাকে কৃতজ্ঞ চিত্রে শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম না। হয়ত এটা আমারই অক্ষমতা? আমার এ অক্ষমতা ক্ষমা করবেন, স্যার।

 

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, ঈশান ইনস্টিটিউশন, ঈশান গোপালপুর, ফরিদপুর।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037240982055664