লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে কালীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের সাথে ‘অপমানজনক’ আচরণ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) আয়োজনে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার চৌরঙ্গী মোড় সড়কে দুপুর ২টা থেকে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করা হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর কার্যালয়ে কালীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও খেলার কোচের নিকট ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এর প্রতিবাদে উপজেলার মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরের শিক্ষকেরা মানববন্ধন ও বিচার দাবি করে উপজেলা চেয়াম্যানের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) উপজেলা সভাপতি পাটগ্রাম টি.এন. স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব প্রধান, সম্পাদক পানবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালিউর রহমান সোহেল, পৌর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম, টি.এন. স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রশিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা গেছে, কালীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের (অনুর্ধ্ব-১৭) ফুটবল খেলার টিমের কোচ রংপুরের আলীম আল সাঈদ খোকনের সাথে ওই বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কোচ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মার নিকট খেলোয়াড়দের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় ১৫ খেলোয়াড় (ছাত্রী) ও কালীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক- শরিফুল ইসলাম, আহাম্মদ আলী, সহিদার রহমান, সুদীপ্ত কুমার বর্মা এবং ওসিসহ থানা পুলিশকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা। এ সময় ওই খেলোয়াড় (ছাত্রী) এবং কোচের নিকট একে একে শিক্ষকদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় বলে শিক্ষকরা দাবি করেন।
ছাত্রীদের নিকট ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় পরদিন রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র/ ছাত্রী ও অভিভাবকরা সকাল সাড় ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কালীরহাট- পাটগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে। পরে থানা পুলিশ ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা গিয়ে শিক্ষকদের অপমানের বিচার হবে জানিয়ে আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।
শিক্ষক সহিদার রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমরা কখনোই কোনো ছাত্রীর খেলার বিরুদ্ধে বা অপবাদমূলক কথা বলিনি। ২৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এতবড় অপমান হইনি। ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তার অফিসে বলেন, আপনারা ক্ষমা না চাইলে আপনারদেরকে পুলিশে দেয়া হবে, মামলা করা হবে। বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাই।’
কোচ আলীম আল সাঈদ খোকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষকদের সাথে কোনো মনোমালিন্য নেই। খেলোয়াড়রা নিজেরা শুনে ইউএনওর কাছে বিচার ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়নি। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদেরকে ক্ষমা চাইতে বলেছি। না হলে আইনের আওতায় আনতে চেয়েছি। শিক্ষকদের নাম ধরে বলিনি। খেলোয়াড়রা বিচার দাবি করে, তাদের ২/১ জন আমার কার্যালয়ে জ্ঞানও হারিয়েছিল।’