ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান কাজল হোসেন। কিন্তু টাকার অভাবে স্বপ্নের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হতে পারছেন না তিনি। তাই ইটভাটায় দিনমজুরি করছেন পিতৃহীন অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থী। কাজলের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী গ্রামে।
জানা গেছে, কুমারী গ্রামের মৃত আয়ুব আলীর তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট কাজল। তিন কাঠা বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাঁদের। সাপের কামড়ে বাবার মৃত্যুর পর বিধবা মা অনেক কষ্টে তাঁদের বড় করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেন। সঙ্গে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। জেএসসি পাসের আগেই বড় দুই ভাই পৃথক হয়ে যান। মাকে নিয়ে শুরু হয় কাজলের অন্য রকম যুদ্ধ। এভাবে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জেএসসি পরীক্ষায়ও তিনি জিপিএ ৫ অর্জন করেন। তারপর স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ শুরু করেন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সামান্য ব্যবধানে জিপিএ ৫ পাননি। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে তিনি জিপিএ ৫ অর্জন করেন। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে দুটিতে টিকেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মেধা তালিকায় ৪৬৯ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৩৯ নম্বর সিরিয়াল তাঁর। আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ছরোয়ার মিঠু বলেন, তিনি কাজলের মায়ের সঙ্গে প্রায়ই কথা বলতেন। একবেলা না খেয়ে থাকলেও পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কাজল যেন দিনমজুরির কাজ না করে সে ব্যাপারে তাগিদ দিতেন। দিনে কলেজ আর রাতে বাড়িতে পড়াশোনা করতে বলতেন।
কাজল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ জন্য যে ঢাকা শহরে ছোটখাটো চাকরি করব বা প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগানোর পাশাপাশি মায়ের জন্য কিছু পাঠাতে পারি সেই চেষ্টা করব। কিন্তু যত দিন কিছু করতে না পারছি, তত দিন আমি কিভাবে ঢাকায় থাকব তা নিয়েই ভাবছি। তা ছাড়া ভর্তির জন্য এখন প্রায় ১৮ হাজার টাকা দরকার।’