জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীদের সাফল্য কামনা ও আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বলেছেন, সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুসতাক আহমদ।
পরীক্ষা শুরুর প্রাক্কালে তিনি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রিয় পরীক্ষার্থীরা, তোমরা জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছ। ইতিপূর্বে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিয়ে এসেছো। সেই হিসেবে বড় পরিবেশে পরীক্ষা দেয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা এটা নয়। সুতরাং, নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার যে বাড়তি উদ্বেগ ও ভীতি মনে আসার কথা, সেটা নিশ্চয়ই হবে না।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও তোমাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ অনুকূল, ইতিবাচক ও শিশুতোষ পরিবেশে তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে স্বাভাবিক পরিবেশে পরীক্ষা দিয়েছো, সেভাবেই পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কিছুতেই বাড়তি চাপ অনুভব করবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য, তোমাদের অধ্যবসায়ের ফল হাতে তুলে দেয়া। সে কারণে আমাদের প্রধান লক্ষ্য, তোমাদের পরীক্ষায় ইতিবাচক পরিবেশ উপহার দেয়া। লেখাপড়া যেমন তোমাদের স্বাভাবিক একটি কাজ। এ পরীক্ষাকেও তেমনি একটি স্বাভাবিক কাজ হিসেবে নেবে। এর বেশি কিছু নয়।’
২ নভেম্বর সারা দেশে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপকালে দেশের প্রধান এ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হক পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘পরীক্ষা সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে নানা গুজব ছড়ানো হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তোমাদের বিভ্রান্ত করতে ও সরকারকে বিব্রত করতে নানা গুজব ছড়িয়ে থাকে। গত কয়েক বছরের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, ষড়যন্ত্রকারীরা যা ছড়ায় তার সবই গুজব। কোনো গুজবে কান দেবে না। এতে লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়; যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, ইতিপূর্বে অধীত বিষয় আর রিভিশন দেয়া হয় না। আমরা তোমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সারা বছর যে লেখাপড়া করেছ, সাফল্যের জন্য সেটাই যথেষ্ট। তোমাদের পাঠ্যবই থেকেই প্রশ্ন আসবে।’
তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘পরীক্ষার আগে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা ও শারীরিক সুস্থতা খুব জরুরি। পরীক্ষার আগের রাতে বেশি জেগে থাকার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ সিটে বসবে। এটা মাথায় রেখে বাসা থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব, যানজট, যানবাহনের প্রাপ্যতা, পথের সম্ভাব্য ঝক্কি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে ২০-২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছাবে; কিন্তু অযথা তাড়াহুড়ো যেন করতে না হয়।’ তিনি বলেন, ‘এবার থেকে কেন্দ্রের বাইরেও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। তাই কেন্দ্রের সামনে জটলা না করার পরামর্শ রইল। সামনে অপেক্ষা না করে কেন্দ্রের ভেতরে সিটে গিয়ে বসে অপেক্ষা করবে।’
অধ্যাপক হক অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘পরীক্ষার আগে সন্তানকে বাড়তি চাপ না দেয়াই শ্রেয়। কেননা, সারা বছর যা লেখাপড়া করেছে, তার বেশি পরীক্ষার আগে আত্মস্থ করার সুযোগ নেই। আবার পরীক্ষায় সব উত্তর করতে না পারার জন্য চাপাচাপি না করে পরের বিষয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করুন।’
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘পরীক্ষার আগে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ওইসব নিছক গুজব। যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে, তাতে কারও হাতে আগাম প্রশ্ন যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, একটি মহল অবৈধ অর্থ উপার্জন আর সরকারকে বিব্রত করতে কথিত প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে থাকে। ওই ধরনের প্রশ্নপত্র খুঁজে সন্তানের হাতে তুলে দিলে আপনি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর অন্যতম হচ্ছে, সন্তানকে অনৈতিকতা শিক্ষা দিলেন। আপনার সন্তানের পরবর্তী জীবনে এ শিক্ষা ভয়াবহ নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে। যার প্রভাব আপনার ওপরও পড়তে পারে। মনে রাখবেন প্রশ্নফাঁস দূরের কথা, গুজব রটানোকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই অনৈতিকতার পেছনে ছুটে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।’
এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনার সন্তান প্রকৃত মেধাবী হলে জীবনে সে সফল হবেই। মেধা কখনোই দমিয়ে রাখা যায় না। সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আপনার সন্তানকে তাই সফল করার লক্ষ্যে অবৈধ ও অনৈতিক পথ না খুঁজে তাকে (সন্তান) অধ্যবসায়ে উৎসাহিত করুন। মেধা প্রস্ফুটিত করতে তার যত্ন নিন।’