ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা এবং কষ্টের একটি বছর - দৈনিকশিক্ষা

ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা এবং কষ্টের একটি বছর

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

পুরো একটা বছর ‘ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘বৈশাখি ভাতা’ না পাবার মনোকষ্টে দিন কেটেছে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর । আজও কাটছে । বৈশাখি ভাতায় আর ক’ টাকা হয় ?  টাকা তো বড় বিষয় নয় । আসল বিষয় মান-মর্যাদা । বৈশাখি ভাতা না দিয়ে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের মনস্তাত্বিক দিক থেকে  একটা কষ্টের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে । সে কষ্টটা এখন অসহনীয় যন্ত্রণা । তাতে শিক্ষকের মর্যাদা কেবল নষ্ট হয়নি , প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে । দুনিয়ার অন্য কোথাও শিক্ষকদের কোন কিছুতে বাদ দেওয়া হয় না। রাষ্ট্র কিংবা সরকার কোন কিছু দেবার ক্ষেত্রে সবার আগে শিক্ষকদের দিয়ে তারপর ভাগে থাকলে অন্যদের দেয় ।  কিন্তু, আমাদের দেশে এর উল্টো । কেন এমন হয় জানিনে ।  আমাদের শিক্ষকদের মর্যাদার আসনটি দেবার ক্ষেত্রে একটি শ্রেণির এত অনীহা কেন ? শিক্ষা ও শিক্ষককে মর্যাদা না দিয়ে পৃথিবীর কোন জাতি বড় হতে পেরেছে ? এ করে কোন জাতি যেমন উন্নতি অর্জন করতে পারে না , তেমনি মর্যাদার আসনেও প্রতিষ্ঠা পায় না । আমাদের দুর্ভাগ্য , স্বাধীনতা অর্জনের এতগুলো বছর পর ও আমাদের শিক্ষা সরকারি এবং বেসরকারি ধারায় পরিচালিত ।

সরকারি ও বেসরকারি ধারায় পরিচালিত বলে শিক্ষায় অনাকাঙ্খিত অনেক বৈষম্য । সে বৈষম্যের সবচে’ বড় শিকার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ । জাতির ভোগান্তিও কম হয় না । দিনে দিনে সে ভোগান্তি ও বৈষম্য কেবল বেড়ে চলে । তা দূর করার কোন প্রয়াস পরিলক্ষিত নয় ।

এখন চৈত্র মাস । বৈশাখ আসতে আর মাত্র ক’দিন বাকি । আসন্ন বেতনের সাথে আবার বৈশাখি ভাতা পাবার আনন্দে উচ্ছসিত সবাই । কিন্তু,  বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ এবারও সেটি পাবেন কী না – কে জানে । সরকারের তরফে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কী না, সে কেউ বলতে পারে না । বৈশাখি ভাতা না পাবার বেদনায় নিত্য ক্ষত-বিক্ষত এ শ্রেণির শিক্ষক-কর্মচারী । কী নির্লজ্জ কায়-কারবার !

বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ! বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সেটি এখন আরো বড় কষ্টের কারণ । অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেলে অন্তর্ভুক্ত হবার পুর্বে তাদের যা হোক নামমাত্র হলেও একটা ইনক্রিমেন্ট ছিল । অনেক না পাওয়ার মধ্যে সেটি ছিল ন্যূনতম এক সান্ত্বনা । এখন সেটিও নেই । টাইমস্কেল এখন কেবল তাদের নয়, কারোর নেই । এর পরিবর্তে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট । আর কোনদিন বেতন কমিশন হবেনা। আসলে এর আর কোন দরকার নেই । সেদিন এক সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম, মূল্যস্ফীতির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করার চিন্তা ভাবনার খবর । সে ভাল কথা । কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট প্রদানের বিষয়টি আজও রহস্যাবৃত কেন? এর মানে কী ? কেয়ামত পর্যন্ত তাদের বেতন এক জায়গায় স্থির রাখা । কী উদ্ভট ও অমানবিক চিন্তা ভাবনা !  মাত্র ক’ বছর পর সরকারি যে কোন ছা পোষা কেরাণী,  পিয়ন কিংবা ড্রাইভারের বেতন ও একজন শিক্ষকের চেয়ে বেশী হবে । শিক্ষকের মর্যাদা তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ?  আবারও শিক্ষক সমাজকে পন্ডিত মশাইয়ের যুগে ফিরে নেবার অপচেষ্ঠা চলছে বলে মনে হয় ।

আমাদের দেশে ভাষণ, তোষণ,  বক্তৃতা ও বিবৃতিতে শিক্ষকদের মান-মর্যাদা অসীম । কিন্তু, বাস্তবে সেটি খুব কম । এ জন্যে আজকাল শিক্ষকতা পেশায় আমাদের মেধাবী প্রজন্ম আসতে  নারাজ । এর খেসারত জাতিকে কতকাল দিতে হবে, সে কেউ জানেনা । এ আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য, জাতীয় ব্যর্থতা ।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে ! বাড়ি ভাড়া পাঁচগুণ করা হয়েছে ! এ রকম অনেক মিথ্যে প্রচারণা তাদের কষ্টটুকু আরো বাড়িয়ে দেয়।এ করে জাতিকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা ঠিক হয় না ।

১৪২৩ বঙ্গাব্দ শেষ হতে সামান্য ক’ দিন আর বাকি । এ বছরটি বৈশাখি ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট না পাবার কষ্টের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার-পরিজনের হৃদয়ে । কষ্টের সে বছরটি অবশ্য শেষ প্রান্তে এখন । এখানেই এ কষ্টের শেষ কীনা – আজ ও তা জানা হয়নি ।

নতুন ১৪২৪ বাংলা বছরের সুচনাতেই সে কষ্টের অবসান হবে-এ প্রত্যাশা সবার । শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য বৈষম্য নিরোধের এক অনন্য মাইল ফলক হয়ে আসুক নতুন এ বাংলা বছরটি । বাঙ্গালিয়ানার স্বাদে কানায় কানায় ভরে উঠুক সবার জীবন ।

[ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।]

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004349946975708