ইন্টারন্যাশনাল তার্কিশ হোপ স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে সরকার - দৈনিকশিক্ষা

ইন্টারন্যাশনাল তার্কিশ হোপ স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে সরকার

রাকিব উদ্দিন |

জঙ্গি কর্মকান্ডের সঙ্গে শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার দায়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল তার্কিশ হোপ স্কুল’ (আইটিএইচএস) এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ সরকার নিতে যাচ্ছে। তুর্কি কর্তৃপক্ষকে নামমাত্র মূল্যে দেয়া বাংলাদেশ সরকারের জমিতেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত। সরকারের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল পরিচালনার নজির না থাকলেও তুরস্ক সরকারের অনুরোধেই স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্বভার নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ বা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ন্যায় স্কুলটি পরিচালনা করতে সুপারিশ করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। স্কুলটি ‘এডেক্সেল ইন্টারন্যাশনাল’ কারিকুলামে পরিচালিত এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে প্লে-গ্রুপ থেকে এ-লেভেল পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে স্কুলটির গুলশান, চট্টগ্রাম ও বগুড়া শাখার কোন অনুমোদন নেই। এদিকে একটি চক্র স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে নিজেরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা  জানিয়েছেন, সরকারি জমিতে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির নিয়ন্ত্রণ কোন বেসরকারি ব্যক্তি বা শিক্ষা ব্যবসায়ীর কাছে থাকবে না। এখন থেকে সরকারই স্কুলটি পরিচালনা করবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এটিএম মঈনুল ইসলাম  বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এটিতে কী রয়েছে, তা এখন মনে নেই। তবে সরকার চাইলে যেকোন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে পারে বা এর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।’
২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি : ‘ইন্টারন্যাশনাল হোপ কোম্পানি লিমিটেড’কর্তৃক স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের ৯ জুন বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে স্কুলটির রেজিস্ট্রেশন পায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হোপ কোম্পানি লিমিটেড’। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৯ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ১০ হাজার টাকায় দুই একর জায়গা (২০০ শতাংশ) বরাদ্দ পায় তুরস্ক সরকার। বর্তমানে এই জমির বাজার মূল্য প্রায় দুই’শ কোটি টাকা।

‘ইন্টারন্যাশনাল হোপ কোম্পানি লিমিটেড’র অধীনে স্কুলটির একাডেমিক কার্যক্রম সমন্বয়ে বর্তমানে পাঁচজন তুর্কি নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট সাতজন পরিচালকের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি এবং তুর্কি নাগরিকদের সমন্বয়ে স্কুলটিতে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি ম্যানেজমেন্ট কমিটিও আছে। এ কমিটিতে ছয়জন তুর্কি নাগরিক এবং আটজন বাংলাদেশ নাগরিক আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই তুরস্কে সংঘটিত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগান সরকারের অনুরোধে স্কুল পরিচালনার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেবরিস অজতুর্ক এ জন্য সরকারের কাছে লিখিত চিঠি দেয়।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেবরিস অজতুর্ক ইতোমধ্যেই সরকারকে জানিয়েছেন, তুরস্ক সরকার ঘোষিত ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন ফেতোর কার্যক্রম বন্ধ ও এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে দেশটি। দেশটি মনে করে, বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ফেতোর কার্যক্রম ও অনুসারী রয়েছে। ঢাকার টার্কিশ হোপ স্কুলের সঙ্গে জড়িত কতিপয় তুর্কি নাগরিক ফেতোল্লাহ গুলেনের অনুসারী। তাই এ স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারকে নিতে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ওজতুর্ক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, টার্কিশ হোপ স্কুলে জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে দূতাবাস থেকে অবহিতও করা হয়েছে। তুরস্কের ফেতুল্লাহ গুলেনের (যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুরস্কের ধর্মীয় নেতা) সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু বাংলাদেশি কাজ করছেন।’ রাষ্ট্রদূত এই সংগঠনের তৎপরতা রুখে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তুর্কি সরকার নামমাত্র মূল্যে নেয়া স্কুলটির জমিও বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিতে চান। এর আলোকেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গত অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। বোর্ডের পক্ষ্য থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনার দায়িত্বভার সরকার কর্তৃক গ্রহণের কোন নজির নেই। তবে সরকার উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করে চলমান এডেক্সেল ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলাম অক্ষুণœ রেখে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ বা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ন্যায় কমিটি গঠন করে স্কুলটি পরিচালনা করতে পারে।’

৩ শাখার রেজিস্ট্রেশন নেই : রাজধানীর উত্তরায় স্কুলটির মূল ক্যাম্পাস রয়েছে। এখানে নিজস্ব জায়গার ওপর নির্মিত ৬ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন আছে। একটি ভবনে জুনিয়র সেকশনে প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে পাঠদান করা হয়। অন্য ভবনে সিনিয়র সেকশনে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে এ লেভেল (একাদ্বশ শ্রেণী পর্যায়) পর্যন্ত ছাত্রদের পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রছাত্রী আছে ৮৪২ জন। এর মধ্যে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১১ শতাংশ।

এছাড়া ভাড়া করা বাড়িতে স্কুলটির ঢাকার উত্তরায় একটি, গুলশানে দুটি, চট্টগ্রামে একটি এবং বগুড়ায় একটি শাখা রয়েছে। ঢাকার উত্তরা মূল শাখার রেজিস্ট্রেশন আছে। অন্য শাখাগুলোর কোন রেজিস্ট্রেশন নেই।
প্রতিষ্ঠানটির সব শাখায় মোট শিক্ষক আছেন ২৫৪ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষক ২১৯ জন এবং বিদেশি শিক্ষক আছেন ৩৫ জন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারী আছেন ১৫৮ জন। স্কুলটির মূল শাখায় বিদেশি শিক্ষক ১৯ জন ও বাংলাদেশি শিক্ষক আছেন ৯১ জন। মূল শাখায় স্টাফ সংখ্যা ৭৬ জন, যাদের সবাই বাংলাদেশি।

বিধি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষক নিয়োগের সময় শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি রাখার নিয়ম থাকলেও স্কুলটির শিক্ষক নিয়োগে তা অনুসরণ করা হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র: সংবাদ

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037920475006104