ইবতেদায়ির জনবল ও বেতন কাঠামো অর্থ মন্ত্রণালয়ে - দৈনিকশিক্ষা

ইবতেদায়ির জনবল ও বেতন কাঠামো অর্থ মন্ত্রণালয়ে

শফিকুল ইসলাম |

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতন ভাতাদি অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮ এর জনবল ও বেতন কাঠামো অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) নীতিমালাটি  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল নীতিমালাটির বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিলো। তবে গত ১২ জুলাই অর্থ মন্ত্রণারয়ের অর্থ বিভাগ প্রস্তাবিত নীতিমালার বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে পুনরায় পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর নীতিমালাটির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নীতিমালার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদরাসা) রওনক মাহমুদ দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন,  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার নীতিমালাটি প্রথমে আমরা  অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদন করাতে বলেন। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম। তিনি সেটির অনুমোদন দিয়েছেন। এখন অর্থমন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়  মতামত দিলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

খুব শিগগিরিই নীতিমালাটি সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান। তিনি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, মাদরাসা পরিচালনা, অনুদান, বেতন-ভাতাদি প্রদান নীতিমালা-২০১৮ অনুমোদন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী  ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ৩৪ বছর যাবত মাদরাসার শিক্ষকরা  বিনা বেতনে চাকরি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা আশা করি এই সরকারের মেয়াদের মধ্যে খুব দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে। 

মাদরাসা শিক্ষাধারার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ইবতেদায়ি স্তর হিসেবে পরিচিত। যেসব মাদরাসায় দাখিল, আলিম, ফাজিল ইত্যাদি স্তরের সাথে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সংযুক্ত স্তরকে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসা আর যেসব মাদরাসায় শুধু প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়, সেগুলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা বলা হয়।  

শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী শিক্ষার অন্যান্য ধারার সাথে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ি পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, আইসিটির মত বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগলোতে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়গুলো পড়ানো হয়। 

জানা গেছে, এমপিওভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা নির্ধারিত হারে বেতন ভাতাদি পেয়ে আসছেন এবং নিয়োগ অব্যাহত আছে। এসব মাদরাসার প্রধান শিক্ষকরা মাসে ১০ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং শিক্ষকরা মাসে ৯ হাজার ৯৮৮ টাকা হারে বেতন ভাতা পাচ্ছেন। 

অপর দিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৫২৯ জন সরকারি শিক্ষা সহায়তা অনুদান পাচ্ছেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে এ ভাতা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষকদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং জুনিয়র শিক্ষক ও ক্বারীদের জন্য ২ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা মঞ্জুরির জন্য নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এরপর বিভিন্ন সময় আদেশ জারির মাধ্যমে নীতিমালার কিছু কিছু বিষয় হালনাগাদ করা হয়েছে। কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতিমালা না থাকায় শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ, নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুদানপ্রাপ্তি এবং নতুন পাঠ্যসূচির সাথে সমন্বয় করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন বন্ধ রয়েছে।  

বাস্তব চাহিদা এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (মাদরাসা) অহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি খসড়া নীতিমালাটি প্রণয়ন করে। এটির অনুমোদন দেন শিক্ষামন্ত্রী। নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে পাঠালে নীতিমালায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠতে বলা হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেন।

সরকারিকরণের দাবিতে গত ৩০ মে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাশিক্ষক সমিতির ব্যানারে  মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। মানবন্ধন শেষে জাতীয়করণের দাবিতে  প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং অর্থ মন্ত্রীর  কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এর  আগে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি থেকে লাগাতার আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। টানা ৮ দিন পর সরকারের পক্ষে  আশ্বাস দিয়ে ১৬ জানুয়ারি মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর শিক্ষকদের অনশন ভঙ্গ করান।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073559284210205