ইবিতে কথার বাইরে গেলেই নির্যাতন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাঙ্গনে টর্চার সেল-৫ইবিতে কথার বাইরে গেলেই নির্যাতন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন সেশনের আগমনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে জমজমাট হয় টর্চার সেল। ক্যাম্পাসের রীতিনীতি এবং আচার-আচরণ শেখানোর নামে করা হয় নির্যাতন। বড় ভাইদের রুমে ডাকা হয় শিবিরের তকমা লাগিয়ে। বিভিন্ন অভিযোগে বের করে দেওয়া হয় হল থেকে। রোববার (২০ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাঁচটি আবাসিক হলই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে। নতুন সেশন আসার পরপরই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম সংস্কৃতি চালু হয়। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বড় ভাইদের আশ্রয়ে হলের গণরুমে স্থান পায়। এরপর মাসখানেক দফায় দফায় তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভীতির মধ্যে রাখে রাজনৈতিক বড় ভাইরা। বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী আইন অনুষদের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার  শর্তে জানান, 'আমরা প্রথমে ক্যাম্পাসে আসার পর আইন বিভাগের ইমিডিয়েট সিনিয়ররা প্রায়ই ডাকতেন।

প্রথমে আমাদের বঙ্গবন্ধু হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের লাঠি, হকিস্টিক, ছুরি দেখানো হয়। বলা হয় তাদের কথার বাইরে না যেতে। এরপর একদিন সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে আমাদের এক বন্ধুকে শিবির সন্দেহে মারধর করে তারা। ওর ম্যাসেঞ্জার চেক করে। কিছু পায় না। এরপর ওকে বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৯ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে অনেক মারে। ও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছিল না। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ ছিল না।' ঘটনাটি ২০১৮ সালের শুরুর দিককার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা এই ঘটনা থেকেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। তবে সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসের হলে হলে এ রকম টর্চার সেলের সংস্কৃতি চালু করে বলে জানা গেছে।

এদিকে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেল নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। জানা যায়, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ২১৩ নম্বর রুমে দু'জন দলীয় কর্মীকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, শিবির সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের শিবির সংশ্নিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন অভিযুক্তরা। সেই সঙ্গে একই হলের জাতীয় ব্লকের ৪১৯ নম্বর রুমের কথাও উঠে আসে। ওই সময় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২০৮ ও ২২৬ নম্বর রুমেও বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগও উঠে আসে। অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের কর্মী ছিলেন। এখন তারা ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মী হিসেবে পরিচিত। এরপর ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটি স্থগিতের পর ছাত্রলীগের ভঙ্গুর অবস্থা শুরু হয়। হলে হলে শক্ত অবস্থান থাকলেও শিক্ষার্থী নির্যাতনের খবর তেমন পাওয়া যায়নি।

প্রায় আট মাস স্থগিত থাকার পর চলতি বছরের জুলাইয়ে নতুন নেতৃত্ব পায় ইবি শাখা ছাত্রলীগ। এতে রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কার্যক্রম আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কিন্তু ঠিক মাসখানেকের মাথায় ছাত্রলীগের মধ্যে আবারও প্রকাশ্য গ্রুপিং শুরু হয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক রাকিবের অর্থের বিনিময়ে পদ পাওয়া ও ড্রাইভার নিয়োগের কথোপকথন ফাঁস হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে অন্যান্য পদপ্রত্যাশী নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এরপর কয়েক দফায় সাধারণ সম্পাদক রাকিবকে ধাওয়া করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। এ ঘটনার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের মুঠোফোন ও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হলে হলে তাদের অনুসারীদের রুমে ডেকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও জানা গেছে।

তবে সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় কঠোর অবস্থানে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১২ অক্টোবর প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে হলগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের নেতৃত্বে ছাত্র-উপদেষ্টা ও প্রভোস্টদের নিয়ে এই মনিটরিং সেল গঠিত হয়। এর মাধ্যমে হলের অভ্যন্তরে কোনো শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে কি-না তা মনিটরিং করা হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, টর্চার সেলের ঘটনা জানা মাত্রই এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছাত্রলীগ বা যে কোনো সংগঠনই হোক না কেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের অপরাধী হিসেবেই গণ্য করা হবে। কোনো রাজনৈতিক কাঠামো দিয়ে তাদের বাঁচানোর সুযোগ নেই।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051860809326172