ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্মকর্তা সমিতি গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন। গত ২ আগস্ট থেকে তিন দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করে আসছেন তারা। এতে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কর্মকর্তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, উপ-রেজিস্ট্রার ও সমমানের কর্মকর্তাদের বেতনের স্কেল চতুর্থ গ্রেডে এবং সহকারী রেজিস্ট্রার ও সমমানের বেতন স্কেল ষষ্ঠ গ্রেডে নিয়ে আসা, কর্মঘণ্টা সকাল ৯ থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার পরিবর্তে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা ও চাকরির বয়সসীমা ৬২ বছরে উন্নীত করা।
এদিকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এসব দাবি বাস্তবায়ন করেছে, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কর্মকর্তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসার চেষ্টা করলেও কর্মকর্তারা আলোচনায় বসছেন না বলে জানা যায়। এতে প্রশ্ন উঠছে কর্মকর্তাদের আন্দোলন নিয়ে। এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
বিষয়টি প্রগতিমীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম, শিক্ষক সমিতি, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা রীতিমতো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকে মনে করছেন, এটি কর্মকর্তাদের মূল দাবি নয়। তাদের মূল দাবি উপাচার্য অপসারণ।
অনেকের অভিযোগ, একটি বিশেষ মহলের উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প লুটপাট, টেন্ডার ভাগাভাগি এবং ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলতে একটি মহল কাজ করছে, যা বর্তমান উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সম্ভব নয়।
উপাচার্য ড. আসকারী দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেশনজট মুক্ত হয়েছে। বিদেশি ছাত্র ভর্তি ও দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে।
ফলে একটি মহল উপাচার্যকে চাপে রাখতে চাচ্ছে। আর কর্মকর্তাদের আন্দোলন উপাচার্যকে চাপে রাখা তথা অপসারণের রূপরেখার অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কর্মকর্তাদের এ আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে নিন্দার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও নিজেদের ব্যক্তিগত আইডিতে কর্মঘণ্টা কমানোসহ অন্যান্য দাবির বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
রফিকুল ইসলাম নামের আইন বিভাগের এক ছাত্র বলেন, ‘তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে উচিৎ শিক্ষা হবে। বর্তমানে ইবি কর্মকর্তাদের ভাব দেখলে মনে হয়, একেকজন যেন সিনিয়র প্রফেসর। আর তাদের ব্যবহারও নোংরা।’
কর্মকর্তাদের এ দাবি অযৌক্তিক উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম জোহা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমরা গত ৪ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বসেছিলাম। তাদের আশ্বাসে আন্দোলন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘কর্মকর্তাদের প্রতিটি যৌক্তিক দাবির প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তবে পদ্ধতিগতভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’