ইবিতে ৫৩ কোটি টাকার টেন্ডারবাজিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা - দৈনিকশিক্ষা

ইবিতে ৫৩ কোটি টাকার টেন্ডারবাজিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্ধশত কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্পের কাজ ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে পাইয়ে দিতে ইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীকে দফায় দফায় হুমকি দেয়া হয়েছে। বুধবার (১৮ মার্চ) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন এএম জুবায়েদ রিপন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, চলমান অন্য মেগা প্রকল্পের টেন্ডার পছন্দের লোককে পাইয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রধান প্রকৌশলীর ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। নানামুখী চাপে ক্লান্ত ইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেসবুকে সোমবার রাতে স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন। এরপরই শুরু হয় তোলপাড়। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে জোট বেঁধে ইবির কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা এই চাপ সৃষ্টি করছেন বলে জানান প্রকৌশলী টুটুল।

তিনি বলেছেন, চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সব তুলে ধরতে চাই। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। বলেছেন, এর আগে বাধ্য হয়ে অন্য প্রকল্প থেকে অনেক টাকা এই চক্রকে দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ইবিতে প্রায় ৫৩৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। সম্প্রতি কয়েকটি কাজের টেন্ডারও আহ্বান করা হয়েছে। ৩০ মার্চ ও ৬ এপ্রিল ৫৩ কোটি ও ৫৩ কোটি টাকার দুটি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। এসব কাজের ঠিকাদার নির্ধারণের আগেই ইবির দুষ্টু চক্রটি একটি প্রকল্পের টেন্ডার ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাকে পাইয়ে দিতে প্রকৌশলী টুটুলের ওপর দফায় দফায় চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকৌশলী টুটুল অপারগতা প্রকাশ করায় তার ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয়েছে। কয়েক দফা হুমকি পেয়ে সোমবার রাতে তিনি তার ফেসবুক পেজে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘ইবিতে আর চাকরি করা হল না আমার, কালকে রিজাইন করব, ইনশাআল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার টুটুল।’

ইবির প্রকৌশল অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মেগা প্রকল্পের চলমান কাজকে ঘিরে এর আগেও স্যারের ওপর (আলিমুজ্জামান টুটুল) চাপ সৃষ্টি করা হয়। তার কাছ থেকে কয়েক দফা টাকাও নেয় প্রভাবশালী ওই চক্রটি। এর মধ্যে ইবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটির বিতর্কিত দুই নেতা পলাশ ও রাকিবও রয়েছেন।

গত বছর ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি ও রাকিবুর রহমান রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাধায় তারা ক্যাম্পাস ছাড়ে। রাকিবের কয়েক দফা জেলও হয়। নানা অপকর্ম করার পরও কমিটির এ দুই নেতা বহাল আছেন। বিতর্কিত এই কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতর আন্দোলন হলেও ফল আসেনি। কেন্দ্র থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানা যায়, এর পেছনে অর্থ ও মেগা প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

এর আগেও ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব প্রকৌশলী আলিমুজ্জামানকে হুমকি ও ব্ল্যাক মেইলিং করে ফায়দা লোটেন। এবারও টেন্ডার ঘিরে কমিটি বাঁচিয়ে রাখতে তারা প্রকৌশলী আলিমুজ্জামানকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হুমকি দিয়ে আসছে। এর পেছনে ইবির বহুল আলোচিত এক শিক্ষকও রয়েছেন। যিনি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করছেন প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল।

এদিকে সোমবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর রাত ১০টায় শহরের ছয় রাস্তার মোড়ে প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের ফ্ল্যাটে যান আলোচিত ও বিতর্কিত শিক্ষক সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান। মাহবুবর রহমান দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যও। এটি জানাজানি হলে সেখানে ছুটে যান সাংবাদিকরা। এক পর্যায়ে মাহবুবর ইবির প্রক্টর পরেশ চন্দ্র বর্মণকে ডেকে নেন। তিনি ঢোকেন রাত ১২টায়।

পরে ফ্ল্যাট থেকে নেমে আসেন শিক্ষক মাহবুবর রহমান। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান এত রাতে প্রকৌশলী টুটুলের বাসায় কেন? তিনি বলেন, আলিমুজ্জামান আমার ঘনিষ্ঠ মানুষ। ব্যক্তি মাহবুব হিসেবে তার কাছে এসেছি। তাকে হুমকি দিচ্ছে কে বা কারা। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তিনি সৎ ও সাহসী মানুষ। আপনার বিরুদ্ধেই অভিযোগের তীর- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধ কেউ কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না।’

এরপর তিনি প্রক্টর পরেশ চন্দ্র বর্মণের গাড়িতে করে দ্রুত সটকে পড়েন।

প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমার মেসেঞ্জারে তারা মেসেস পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তারা জোর করে কাজ নিতে চায়। এর আগেও তারা আমার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে। সব ডকুমেন্ট আছে। আমি আর চাকরি করব না। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করে সব বলব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তিনি থানায় জিডি করবেন বলেও জানান। এর আগেও জিডি করেছিলেন তিনি।

টুটুল তার ওপর হামলার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ইবি প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেগা প্রকল্পের যে কাজ চলছে, তা থেকে একটি চক্র নিয়মিত কমিশন নেয়। প্রকৌশলী টুটুল নিজে কোনো কমিশন নেন না। তারপরও ওই চক্রের চাপে তিনি কমিশন নিতে বাধ্য হন। সেই অর্থ যায় কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ও রাকিবের পকেটে।

অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের ৪০ লাখ টাকায় ম্যানেজ করে ইবির নেতা হন পলাশ ও রাকিব। একপর্যায়ে শোভন ও রাব্বানির কমিটি বাতিল হলে চাপে পড়েন তারা। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে তারা ম্যানেজ করে আসছেন। ইবির ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আশকারী বলেছেন, ‘টুটুল অনেক ভালো ছেলে। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে মেগা প্রকল্পের কাজ হবে না। প্রয়োজনে কাজ বাতিল হবে। কারা চাপ সৃষ্টি করছে, আমি জানি না। তবে টুটুল যে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমি করতে প্রস্তুত আছি।’

টুটুলের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ইবির উন্নয়নে তার অবদান অনেক। তিনি কাজ করতে চান। তবে একটি মহল বারবার তাকে চাপ সৃষ্টি করছে। তার কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছেন। আবার কাজও জোর করে নিতে চান। হুমকিধমকি দেয়ায় তিনি অনেকটা ভেঙে পড়েছেন।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060510635375977