ইয়াবা আসক্ত স্কুলছাত্রী, অভিভাবককে হুঁশিয়ারি - Dainikshiksha

ইয়াবা আসক্ত স্কুলছাত্রী, অভিভাবককে হুঁশিয়ারি

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী নগরীর দুইটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ইয়াবা আসক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে বিষয়টি জানিয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রীদের সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং কাউন্সিলিং দেয়া হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে ছাত্রীদের মাদকাসক্তি থেকে বের করে আনতে তাদের সচেতন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীতে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে। ফলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা প্রধানত কৌতূহলবশত মাদক গ্রহণ করছে। তবে কেউ কেউ স্মার্টনেস, নিজেকে উপস্থাপন, অনুকরণ, পারিবারিক অশান্তি ও প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজশাহীর বেশির ভাগ স্কুলেই কমবেশি কয়েকজন ছাত্র পাওয়া গেছে যারা মাদকাসক্ত। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বিষয়ে জানেনই না। ধূমপায়ীদের মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে প্রতিটি স্কুলে ছাত্রদের একটি দলই রয়েছে যারা টিফিন পিরিয়ডে কিংবা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ধূমপান করে। এর পাশাপাশি এখন ছাত্রীদেরও মাদকাসক্ত হওয়ার বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরতে হবে। এছাড়া পড়ালেখার বাইরে তাদেরকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত করতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেসব কারণে একজন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেসব বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তার অল্টারনেটিভ কর্মকৌশলও ঠিক করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হওয়ার সুযোগ না পায়।

শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও অতিসত্ত্বর যাচাই করে দেখা দরকার বলে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। কেননা, ইতোমধ্যেই একটি বালিকা বিদ্যালয়ের আসক্ত এক শিক্ষার্থী অপর এক শিক্ষার্থীর কাছে ইয়াবা বিক্রির চেষ্টা চালিয়েছিল। তখনই বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

সাংস্কৃতিক কর্মী ইউসুফ রেজা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, অতিরিক্ত ইন্টারনেট প্রিয়তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোবৈকল্য ও মনোরোগের জন্ম দিচ্ছে। তারা সামাজিকভাবে বেড়ে উঠছে না। ফলে খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদেরকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করতে মাদকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। একই ভাবে শিক্ষার্থীদেরকে খেলাধুলা, গান-বাজনা, নৃত্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিম আহমেদ তুষার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রথমত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। কারণ, শিক্ষার্থীরা মাদক সম্পর্কে ভাসাভাসা ভাবে জানে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। জানে না বলেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এই জন্য মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, শিক্ষার্থীরা যেসব কারণে মাদকাসক্ত হতে পারে বলে আমরা মনে করছি, তার অল্টারনেটিভ পদ্ধতি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যাতে করে তারা মাদকাসক্ত না হতে পারে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান জানান, মাদক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা করে। এরপরও কেউ যদি কৌতূহলবশত মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাকে নিয়ে গিয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। যাতে করে ওই শিক্ষার্থীরা মাদকের সর্বনাশা থাবা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। এছাড়া আমরা প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্ত না হওয়ার বিষয়ে সচেতন করছি।

লুৎফর রহমান আরো বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রার্থীরা মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ডোপ টেস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডোপ টেস্ট ছাড়া কেউ আর সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাবে না। এই বিষয়টিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের এই বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়গুলোতে যাতে কোনোভাবে মাদক না ঢুকে সেই বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে।

মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065028667449951