উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখছে সুখী - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখছে সুখী

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): |

বাড়ির উঠোনে হোগলা বিছিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে পুরনো বই, খাতা, নোট। পাশে বসে বইয়ের একেকটি পৃষ্ঠা উল্টে দেখছে সুখী। কখনও বা খাতার শেষ পৃষ্ঠায় নোট নিচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষে যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেকারণে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই সুখী শুরু করেছে পুরনো বই দিয়ে নতুন বছরের পাঠ প্রস্তুতি। সে এবছর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার তুলাতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। 

কলাপাড়ার রামনাবাদ নদীঘেঁষা প্রত্যন্ত চর বালিয়াতলী গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয় সুখীকে। ওই গ্রামে সূখীর বয়সী ছেলে মেয়েরা সকাল হলেই কেউ মাছ ধরে, মাছ শুকায়, কেউবা মাঠে ধান কুড়ায়। শিক্ষার আলো বঞ্চিত পুরো গ্রামকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখছে সুখী।

সুখীর বাবা অহিদুল হাওলাদার পেশায় জেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়। মেঝ ভাই হামিদুল দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও ছোট দুই জন জুনায়েদ ও জিয়াদ শিশু শ্রেণির ছাত্র। দরিদ্র হলেও সন্তানদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন সুখীর বাবা।

কলাপাড়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বালিয়াতলী ইউনিয়নের রামনাবাদ নদীর তীরে চর বালিয়াতলী গ্রাম। গ্রামের পাশেই সাগর মোহনায় জেগে উঠেছে চর হাবিব। দিনের বেলায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সেই চরে কেউ মাছ ধরে, কেউ ধানের ছড়া কুড়ায়। সাগর, নদী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা চরের পরিবারগুলোর কোন স্থায়ী কাজ না থাকায় শ্রম বিক্রি ও মাছ ধরেই সংসার চলে তাদের। এ কারণে এসব পরিবারের সন্তানরা প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরোতেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তাই চর হাবিব ও চর বালিয়াতলী গ্রামে বাল্যবিয়ে ও শিশু  শ্রমিকের সংখ্যাটাও বেশি। 

সুখীর বয়সী চরের অনেক স্কুল ও মাদরাসা ছাত্রীর বাল্যবিয়ের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। তাই  উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ অনেক কঠিন। সুখী জানায়, একসময় তার অনেক সহপাঠী ছিলো। এখন পুরো গ্রাম থেকে মেয়েদের মধ্যে সে একাই স্কুলে যায়। অনকে কষ্ট করে ক্লাস এইটের পুরনো বই ও নোট-খাতা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে সে আরো বলে, ‘আমাকে তো একা একাই পড়তে হয়, তাই পরীক্ষা শেষে দেরি না করে পড়া শুরু করেছি।’   

সুখীর মা আসমা বেগম বলেন, সুখী পড়তে চায়। রোজ কতদূর হাঁইটা স্কুলে যায়। মাইয়া বড় হইছে। একা একা স্কুলে পাঠাতে ভয়ও করে। কিন্তু মেয়ে পড়াশোনা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।

সুখীর বাবা অহিদুল হাওলাদার বলেন, ইচ্ছা তো আছে মাইয়াডারে পড়ামু। আমরা স্কুলে যাইতে পারি নাই টাহার কারণে। গায়ে যতোদিন শক্তি থাকবে সুখীরে পড়ামু। 

সুখীর স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুখী ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। তার অনেক সহপাঠী বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দিলেও সুখী একাই সংগ্রাম করছে এখন। কিন্তু দারিদ্রের মধ্যে সে কতদূর এগোতে পারবে, এটাই এখন প্রশ্ন।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040359497070312