শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে। জাহেলিয়াত যুগের বর্বরতা হয়েছিল শিক্ষার অভাবে। অসভ্য জাতিকে সভ্য জাতিতে পরিবর্তন করার মাধ্যম হলো শিক্ষা। আধুনিক যুগের যত আবিষ্কার ও পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে তা শিক্ষার দ্বারা। যে শিক্ষা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে না, যে শিক্ষা আচরণকে পরিবর্তন করতে পারে না ও শিষ্টাচার থেকে দূরে থাকে তাকে শিক্ষা বলতে পারি না। শিক্ষা তাকে বলা যেতে পারে যেখানে শিক্ষার্থীর আচরণ শিষ্টাচার, নম্রতা, ভদ্রতা ও শারীরিক পরিবর্তন আনে। এর ভিত্তিতে যদি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিকে তাকাই তাহলে শিক্ষার সংজ্ঞা বড়োই বেমানান। রোববার (১২ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের দিন কাটে আতঙ্কের মাধ্যমে যে কখন কোন্ দল এসে হামলা করে, প্রতিটা মিনিট শিক্ষার্থীদের জীবন থাকে বড়ো ভাইয়ের নজরদারির ওপর। অন্যদিকে আর এক সমস্যা হলো আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আসনসংখ্যা না থাকা এবং বহিরাগত শিক্ষার্থী এবং পুরোনো শিক্ষার্থী দ্বারা আবাসিক হল দখল করে রাখা। যে সব শিক্ষার্থীর জীবন আতঙ্কের মধ্যদিয়ে কাটে তাদের দিয়ে ভালো গবেষণা কি করে হবে। ভালো গবেষণার জন্য দরকার সুন্দর পরিবেশ ও গবেষণার উপকরণ। আমি অনেক দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখেছি যেখানে কোনো প্রকার মিছিল হয় না এবং কোনো প্রকার দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয় না তবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ইউনিয়ন রয়েছে, ছাত্র ইউনিয়ন শুধু ঐ দেশের ইউনিয়ন নয় বিভিন্ন দেশের ছাত্র সংগঠন এবং তাদের ইউনিট রয়েছে। পত্রিকার পাতায় আর দেখতে চাই না কোনো শিক্ষার্থীর অপমৃত্যু ও বিশৃঙ্খলা। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মেধা আছে, শক্তি আছে সামর্থ্য আছে তবে মেধাকে সঠিকভাবে সঠিক কাজে লাগানোর সুযোগ কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর বন্ধুসুলভ আচরণের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড দেখেছি যারা প্রথমসারির দেশগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে আছে। আমরা যদি অন্য দেশে এসে অন্য দেশের ভাষা, পরিবেশ ও সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করতে পারি তাহলে নিজের দেশ, নিজের মানুষ, নিজের দেশের ভাষা ব্যবহার করে কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্ব র্যাংকিংয়ের পাশে এগিয়ে নিতে পারব না। কেনই বা আমাদের ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি সৃষ্টি হবে। ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত আদর্শের, ছাত্রনেতাদের আদর্শ দেখে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়ে তাদের দিকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিবে সহযোগিতা করার জন্য।
আমরা পারি ও আমরা পারব, ভাষাকে আমরা জয় করেছি, স্বাধীনতাকে আমরা জয় করেছি, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়ে। আমাদের বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যদিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক র্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব ভালো একটা স্থান দখল করবে এবং আমাদের ছাত্ররাজনীতির আদর্শ ফিরে আসবে। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ জন্মবার্ষিকীতে ফিরে আসবে ছাত্ররাজনীতির আদর্শ ও উজ্জ্বল গৌরব। ফিরে আসবে আবার উজ্জ্বল ধারা, ফিরে আসবে বন্ধুত্বের সুবাতাস, সবার মুখে ফিরে আসবে ভালোবাসা ও প্রশান্তির হাসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবে শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর মনে শান্তি এবং লেখাপড়ার সুপরিবেশ—এটা আমাদের বিশ্বাস।
মো. হুসাইন আলম : শিক্ষার্থী, পিএইচডি ক্যান্ডিডেট অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারক্লো, পোল্যান্ড।