উচ্চশিক্ষার নামে মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চশিক্ষার নামে মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। মালয়েশিয়ার কলেজে ভর্তি করানোর নামে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এসব করা হচ্ছে সেদেশের অখ্যাত কিছু বেসরকারি কলেজ ও তাদের দালালদের মাধ্যমে। প্রতারণার খপ্পরে পড়া ওইসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় গিয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন কঠিন বাস্তবতার। দেশটিতে পৌঁছানোর পর তারা টের পান স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। উপলব্ধি করেন শিক্ষার্থী পাচার বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন তারা। আর পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে মানবেতর পরিবেশে অবৈধভাবে কাজ করা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় থাকে না। এভাবে পরিবারের সর্বস্ব ব্যয় করে মালয়েশিয়ায় পড়তে যাওয়া হাজার হাজার বাংলাদেশি আটকা পড়েন শোষণ আর চাঁদাবাজির এক জালে। সোমবার (১৪ আগস্ট) মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে এসব ভয়াবহ তথ্য।

দ্য স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অখ্যাত কিছু বেসরকারি কলেজ ও তাদের ‘বিবেকবর্জিত’ দালালদের মাধ্যমে কয়েক হাজার বাংলাদেশি তরুণ মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে। মালয়েশিয়ার কলেজে ভর্তি হতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এসব দালালকে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা ২০ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা) পর্যন্ত দিতে বাধ্য হন। তবে এখানেই বঞ্চনার শেষ নয়। দ্য স্টারের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাচার বাণিজ্যের শিকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর বুঝতে পারেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আশায় তারা যে কলেজে ভর্তি হয়েছেন সেখানে আসলে ক্লাস হয় না। কলেজের নামে সেটা আসলে অন্য কিছু। আবার স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কারণে তারা সেখানে বৈধভাবে কাজও করতে পারেন না। উপরোন্তু, তাদেরকে অতিরিক্ত ফিও দিতে হয়। অনেকেই তখন অন্য উপায় না পেয়ে মানবেতর পরিবেশের মধ্যে অবৈধভাবেই কাজ করতে শুরু করেন। দেনা চুকানো, বাড়ি ফেরার টিকিট কেনা এবং স্টুডেন্ট ভিসা নবায়নের জন্য (এই ভিসা নবায়ন করলে আরও এক বছর তারা কাজ করতে পারেন) আবার দালালদের টাকা দেওয়ার চিন্তায় তারা লেখাপড়ার কথা ভুলে গিয়ে উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।

দ্য স্টার জানায়, দেশটির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর.এজ (R.AGE) নামের একটি সংগঠন দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ পাচারচক্রগুলোকে উন্মোচন করেছে। সংগঠনটির নতুন একটি ভিডিও সিরিজে এর আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

দ্য স্টার জানায়, আর.এজ এর ওই দলটির সদস্যরা ফ্যাক্টরি ম্যানেজার সেজে সস্তায় শ্রমিক খুঁজছিলেন। তখনই দালালদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাচার বাণিজ্য প্রক্রিয়াটি এসময় তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। দালারদের একজন তখন জানান, তিনি দাতুক নামের এক ব্যক্তির হয়ে কাজ করেন। কুয়ালালামপুরে দাতুকের একটি কলেজ রয়েছে এবং তিনি মালয়েশিয়ায় ৮ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে এনেছেন (পাচার করেছেন) বলেও স্বীকার করেন ওই দালাল। দালালদের মধ্যে মালয়েশীয় ছাড়াও অন্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন। যেমন কথা বলা এই দালালটি ছিলেন নেপালের নাগরিক।

দ্য স্টারের সাংবাদিককে ওই নেপালি দালাল বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরকে জোগাড় করা সহজ এবং দ্রুত টাকা পাওয়া যায়। ২০০-৩০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে এখানে নিয়ে আসো, বিভিন্ন কলেজে ভাগ করে দাও আর তুমি টাকা কামাও।’

অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে আর-এজ টিম ৩০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দেখা পেয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থী পাচারকারীদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩০টি কলেজকেও শনাক্ত করেছে তারা।

ভুক্তভোগী এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দ্য স্টারকে জানান, তার বাবা দুইবার স্ট্রোক করেছেন। বাবার ওষুধ খরচের জোগাড়ের জন্য তার আর ওইভাবে কাজ না করে উপায় নেই। ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বাড়ি যেতে পারছি না, কারণ আমার পরিবার দালালদের হাতে তাদের সব সঞ্চয় দিয়ে দিয়েছে।’

আরেক শিক্ষার্থী জানান, তাকে মালয়েশিয়ায় পড়াতে পরিবার ঋণ নিয়েছে। মাসে মাসে তাদেরকে ২১ হাজার টাকা করে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এখন সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন ওই শিক্ষার্থী। তার মাসিক আয় ২৮ হাজার টাকা। এই অর্থ থেকেই দেশে টাকা পাঠাতে হয় তাকে।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাকায় যেভাবে আস্তাকুঁড়ে ময়লা ফেলা হয় তার চেয়েও বাজেভাবে এখানে জীবন-যাপন করছি আমরা।’

দ্য স্টার জানায়, তাদের এক সাংবাদিক ওই কলেজগুলোর একটিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হিসেবে যান। কিন্তু তাকে নিষেধ করে দেওয়া হয়। কলেজের এক কর্মী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের লোক (মালয়েশীয়) এখানে ভর্তি হতে চাইলে আমরা নিষেধ করি। চারদিকে দেখুন। পুরো স্থান ফাঁকা। আমি চাই না কোনও শিক্ষার্থী এখানে আটকা পড়ুক।’

এর আগে ২০১৩ সালে অখ্যাত কলেজের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পাচারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য স্টার। ২০১৫ সালে এ ধরনের চারটি প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী লাইসেন্স বাতিল করেছিল মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070590972900391