এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন টেনশন দেখা দিয়েছে ভালো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে। এবার যে সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, তার তুলনায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষায় অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থাকবে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ) সমকালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
বরাবরের মতো এবারও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫ পেয়েছেন সর্বাধিক। তাই মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হবে তীব্র ভর্তি প্রতিযোগিতা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে আসন সংখ্যা মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর তুলনায় বেশি। তারপরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো বিষয়গুলোতে ভর্তির প্রতিযোগিতা কমবে না।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুসারে সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, কারিগরিসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ২২ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৯। এবার তা আরও বাড়তে পারে। আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার পাস করেছেন নয় লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। সে হিসেবে আসন ফাঁকা থাকছে অর্ধেকেরও অনেক বেশি
মো. ফসিউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্র দিয়ে জানিয়েছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব মিলিয়ে আসন রয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৪ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ৬১ হাজার ৯৪২টি। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫৩ হাজার ১৪৮টি আসন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সেখানে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ আসন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক হয়ে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এসব কলেজেও রয়েছে কয়েক লাখ আসন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক
(পাস) ও প্রফেশনাল কোর্সসহ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ আসন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ৪ লাখ ৯২০ হাজার, স্নাতক (পাস) কোর্সে দুই লাখ ৫০ হাজার এবং প্রফেশনাল কোর্সে ১২ হাজার আসন। তবে গত বছর স্নাতকে (সম্মান) শিক্ষার্থী ভর্তি হন ৩ লাখ ৯৬ হাজার।
সব মিলিয়ে তাদের আসনে কোনো সংকট নেই। বরং কিছু আসন ফাঁকাই থাকবে।
উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এর মধ্যে শুধু বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৭৫২ জন। অথচ মেডিকেল ও প্রকৌশল মিলিয়ে মোট আসন রয়েছে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার।
মেডিকেল কলেজ সূত্র মতে, পাবলিক-প্রাইভেট মিলিয়ে মেডিকেল আসন রয়েছে সাড়ে ১০ হাজারের মতো। ফলে মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। একই অবস্থা হবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে বুয়েট, ডুয়েট, কুয়েট, রুয়েট ও চুয়েট- এ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৭৪। এর মধ্যে বুয়েটে সর্বাধিক দুই হাজার ১২০টি আসন রয়েছে।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য মতে, এবার মোট জিপিএ ৫-এর তুলনায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে আসন সংখ্যা বেশি। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রায় সাত হাজার আসন রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭২২টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৭৪টি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ২৫২টি আসন রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে আড়াই লাখের বেশি। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ভর্তি হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকে।